নিজস্ব মার্কেট চায়নাসহ বিশ্ববাজারে হুয়াওয়ে লঞ্চ করল তাদের নতুন মডেল ম্যাট 40 প্রো । এখন পর্যন্ত যতগুলো ফ্ল্যাগশিপ মডেল বাজারে লঞ্চ হয়েছে , এগুলোর মধ্যে এই মডেলটি অনেকটা অন্যতম বলে আমার কাছে মনে হয় । নিজেদের মার্কেটপ্লেস ছাড়াও মোবাইলটিকে লঞ্চ করা হয়েছে বিশ্ববাজারে । প্রায় আইফোন এর সমতুল্য দাম দিয়ে এই মোবাইলটিকে কিনতে হবে । হাই কোয়ালিটি স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে এই মডেলটি অন্যতম । স্মার্টফোনটিতে নতুন কি কি আকর্ষণ রয়েছে এবং এত দাম দিয়ে মোবাইলটি কিনা উচিত হবে কিনা ? ফোনটি কি পারবে টাকা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দিতে ও গেমিং পারফরমেনর জন্য কতটুকু পারফেক্ট এই মোবাইলটি ? মডেলটি কি পারবে ফ্রী ফায়ার এবং পাবজির মতো প্রথম সারির গেমগুলো গ্রাফিক্সের সাথে গেমপ্লে করার ফাস্টেস্ট পারফরম্যান্স দিতে বিষয়গুলো আলোচনা করা যাক ।
নেটওয়ার্কিং সিস্টেম
ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এর মোবাইল ফোন কিনার জন্য যারা আগ্রহী তাদের জন্য এই মোবাইলটি সেরা হতে পারে । দেশের উন্নত মানের নেটওয়ার্ক 4 জি এর সাথে এই মোবাইলটির ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অপশন রাখা হয়েছে । এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অপশন চালু হয়নি তবে খুব শীঘ্রই চালু হতে চলেছে । থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যান্ডে প্রতি সেকেন্ডে সর্বনিম্ন 850 এবং সর্বোচ্চ 2100 এমবিপিএস নেটওয়ার্ক চালানো যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক এর ভার্সনগুলো হলো 1,2,3,4,5,6,7,8,9,12,17,18,19,20,26,28,32,34,38,39,40,41,42 । ফোরজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 42.2 এবং সর্বনিম্ন 5.76 বিপিএস নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এর ভার্সনগুলো হলো 1,3,5,7,8,28,38,40,41,77,78,79,80,84 । nano-sim এর সাথে ব্যবহার করা যাবে ডুয়েল সিম । এছাড়াও ব্যবহার করা যাবে জিপিআরএস ।
ডিসপ্লের ধরন
মডেলটিতে ওএলইডি এলসিডি টাইপ রয়েছে যার সাইজ 6.76 ইঞ্চি । সাইজ তুলনামূলক বড় আকৃতির । স্ক্রীন টু বডির রেডিও রেট 94 .1 পারসেন্ট । 1344×2772 পিক্সেল রেজুলেশনের সাথে ডিসপ্লের ঘনত্ব রয়েছে 456 পিপিআই ডেনসিটি । ডিসপ্লের স্ক্রিনে সাপোর্ট করবে 16 মিলি কালার । এলসিডি প্যানেলটিতে 90 হার্জের রিফ্রেশ রেট থাকার কারণে যেকোনো সফটওয়্যার খুব সহজেই রান করানো যাবে । ডিসপ্লে রেজুলেশনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব এখানে রয়েছে ভালো মানের এবং হাই কোয়ালিটির রেজুলেশন যা একটি ভালো মানের স্মার্টফোনে থাকা একান্ত প্রয়োজন । প্যানেলটির ফিচার হিসেবে পাওয়া যাবে multi-touch । ব্রাইটনেস এর পরিমাণও খুবই অত্যাধিক রোদে এবং স্বল্প আলোতে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করতে কোন সমস্যা হবে না । ডিসপ্লে ডেকোরেশন আমার কাছে পার্সোনাল ভাবে বেশ ভালো লেগেছে । কেবলমাত্র আমার কাছে নয় যারা এই ফোনটিকে কিনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ডিসপ্লে কোয়ালিটি তাদের কাছে খুবই ভালো লাগবে বলে আশা করা যায় ।
ক্যামেরা সেটআপ
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় দেওয়া হয়েছে ত্রিপল রেয়ার ক্যামেরা । ওয়াইড ক্যামেরায় রয়েছে 50 মেগাপিক্সেল , জুম সহকারে ছবি তোলার জন্য পেরিস্কোপ টেলি ফটোতে রয়েছে 12 মেগাপিক্সেল,3 ডি আকারের ছবি তোলার জন্য ডেপ্ট ক্যামেরায় রয়েছে 20 মেগাপিক্সেল । যেকোন ভিডিও 1080 পিক্সেলে ফুল এইচডি মুডে রেকর্ডিং এবং দেখা যাবে । ক্যামেরা দিয়ে সেলফি তোলা যাবে 13 মেগাপিক্সেলে । ব্যাক ক্যামেরা সাথে সংযুক্ত রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট । ক্যামেরা ফিচারে হাই কোয়ালিটির দারুণ পারফরর্মেন্স না পাওয়া গেলেও মিডিয়াম কোয়ালিটি ভিতর ভালো পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে পাওয়া যাবে । নাইট মুড , পানোরামা , এইচডিআর, বিউটি ক্যামেরা সব ধরনের ফিচার পাওয়া যাবে । সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বিষয়টি যে এই মোবাইলটির দিয়ে ডিএসএলআর আকারে ব্লার করে ছবি তলা যাবে । এই বিষয়টি মডেলটি একটি পজিটিভ সাইট । তবে ফ্রন্ট ক্যামেরায় আরেকটু নজর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল ।
প্রসেসর প্ল্যাটফর্ম এবং বডি ডিজাইন
হ্যান্ডসেটটিতে Kirin 900 5G মডেলের চিপসেটের পাশাপাশি Octa-Core (1×3 .13 GHz cortex -A77 & 3×2.54 GHz cortex -A77 & 4×2.04 GHz Cortex-A55) মডেলের প্রসেসর এবং জিপিইউ রয়েছে Mali-G78 । মোবাইলটির অপারেটিং সিস্টেমে রাখা হয়েছে তাদের তৈরি অ্যান্ড্রয়েড 10 । মোবাইলটির বডি বিল্ড এ রয়েছে গ্লাস ফ্রন্ট এবং অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম । স্মার্টফোনটি ধুলো এবং পানিরোধী হওয়ায় তুলনামূলকভাবে ভয় কম । মোবাইলটিকে সাদা,কালো সিলভার ,হলুদ এবং সবুজ কালারে মার্কেটে পাওয়া যাবে । 6.4 1 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, 2.97 ইঞ্চি প্রস্থ এবং 0.36 ইঞ্চি পুরুত্ব বিশিষ্ট মোবাইলটির বডির সাইজ । 212 গ্রামের এই মোবাইল ফোনটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় রূপে সজ্জিত ।
অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এই কোম্পানিটিকে গুগলের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় না । তার কারণ হচ্ছে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে । এক্ষেত্রে আপনি গুগল এবং প্লেইস্টর ব্যবহার করতে পারবেন না তবে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল এবং সফটওয়্যার গুলো তাদের অ্যাপ গ্যালারি থেকে ইন্সটল করতে পারবেন কোন সমস্যা নেই ।
রেম ও রোম
হাই কোয়ালিটির এই মোবাইল ফোনটির মেমোরির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই 8 জিবি রেমের সাথে রয়েছে 128 ও 256 জিবি রোম । মেমোরির কার্ড স্লটে রয়েছে ন্যানো মেমোরি । ওটিজি ক্যাবল দিয়ে 512 জিবি পর্যন্ত রেম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । ফাস্টেস্ট গতির সাথে সিনেমা, নাটক বিপুল পরিমাণে সংগ্রহ করার সুবিধা তো থাকছেই । স্মার্টফোনটির মেমোরি পারফরম্যান্স খুবই ভালো । 8 জিবি রেম দিয়ে একটি মোবাইলকে ফুল স্পিডে ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই এবং এখানে ব্যবহার করা যাবে যে কোন মানের হাই কোয়ালিটি এবং লো কোয়ালিটির সফটওয়্যার । পর্যাপ্ত পরিমাণে স্টোরেজ থাকার কারণে এখানে সংগ্রহ করে রাখতে পারব প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই । ব্যবহার করার সময় কখনো হ্যাং অথবা লেক করার সম্ভাবনা নেই । খুবই হাই কোয়ালিটির মেমোরি পারফরমেন্স রয়েছে যা আপনার চাহিদার থেকেও বেশি হতে পারে ।
ব্যাটারি
লিথিয়াম পলিমার টাইপের ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 4400এমএইচ পাওয়ার । মোবাইলটির সাথে যে চার্জার পাওয়া যাবে তা দিয়ে 66 ওয়াট গতিতে দ্রুত চার্জ দেওয়া যাবে । তারবিহীন এবং কুইক চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম এ 50 ওয়াট দ্রুতগতিতে মোবাইলটি চার্জ হবে । ব্যাটারি পারফরমেন্স একটি হতাশার কারণ বলে মনে হতে পারে । কেননা আইফোনের সমতুল্য একটি স্মার্টফোন যার ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে রয়েছে মাত্র 4400 mAh পাওয়ার । এদিক দিয়ে মোবাইলটি অনেকটা পিছিয়ে বলা চলে । তবে এখানে আবার রাখা হয়েছে তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম যার জনপ্রিয়তা বর্তমানে ব্যাপক । চার্জিং স্পিড অনেক ফাস্ট যার কারণে আপনাকে মোবাইলটি চার্জের জন্য অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে না । এখানে আবার রিভার্স চার্জিং সিস্টেম দেখা যায় অর্থাৎ আপনি 5 ওয়াট দ্রুতগতিতে আপনার মোবাইল থেকে অন্য একটি মোবাইলে চার্জিং ডেলিভারি করতে পারবেন ।
সিকিউরিটি
মোবাইলটিকে সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি পদক্ষেপ রাখা হয়েছে । তারমধ্যে একসিলোমিটার , প্রক্সিমিটি, কম্পাস এবং আন্ডার ডিসপ্লেতে যুক্ত করা হয়েছে জনপ্রিয় মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । যা অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্তকরণে সাহায্য করবে ।
বর্তমান সময়ে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর জনপ্রিয়তা অনেক হারে দেখা যায় । বিশেষ করে মোটামুটি স্বল্প মূল্যের স্মার্টফোন থেকে শুরু করে হাই কোয়ালিটি এবং উচ্চ মানের স্মার্টফোনগুলোতে ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি দেখা যায় । হুয়াওয়ের নতুন এই মডেলটিতেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া হয়েছে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি অনেকটাই দ্রুতভাবে কাজ করতে সক্ষম । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার না করা হলে হয়তো মোবাইলটির সিকিউরিটি সিস্টেমের প্রায়োরিটি অনেকটাই কমে যেত । কেবলমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নয় অন্যান্য সেন্সরগুলো খুব ভালোভাবে সনাক্ত করতে সাফল্য অর্জন করবে । ফেস আনলকিং সিস্টেম এর উপস্থিতিও লক্ষ করা যায় ।
গেমিং পারফরম্যান্স কেমন দিবে ?
হাই পারফরম্যান্সের এই মোবাইলটি গেম খেলার জন্য যোগ্য । মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করার কারণে অনলাইন গেম গুলো ভালো মানের গ্রাফিক্সের সাথে খুব সহজে খেলা যাবে । ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি গেম গুলো ফাস্টেস্ট স্পিডে খেলা গেলেও ভালো মানের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়নি বলে বেশিক্ষণ গেম প্লে করা যাবে না ।
প্রায় আইফোনের মূল্যের কাছাকাছি থাকা অন্য একটি স্মার্টফোন দিয়ে গেম প্লে করা যাবে না , এটা কি কখনো হয় । আমরা অনেকেই আছি যারা প্রফেশনালভাবে গেমপ্লে করে থাকি । তো যারা গেমপ্লে করার জন্য এই মডেলটির উপর আস্থা এনেছেন তাদের জন্য এই মডেলটি ভালো পারফরর্মেন্স দিবে বলে আমি আশা
করি । মেমোরি পারফরম্যান্স এবং প্রসেসর প্রায় সবকিছুই মিডিয়াম কোয়ালিটি মধ্যে থাকার কারণে গেম খেলার জন্য পাওয়া যাবে উন্নতমানের গ্রাফিক্স
ডিজাইন । তবে ব্যাটারিটি বেশিক্ষণ গেম প্লে করার জন্য উপযুক্ত নয় ।
রিলিজ তারিখ এবং প্রাইস
দেশের বাজারে মোবাইলটিকে 10 ই মার্চ, 2021 রিলিজ করা হয় । মোবাইলটি হাই কোয়ালিটির হওয়ায় দাম একটু বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক । দেশের মার্কেটে মোবাইলটির দাম 85,000 টাকা । যেহেতু এই মোবাইলটিকে ভালো মানের পারফরম্যান্সের সাথে পাওয়া যাবে সেহেতু মোবাইলটিকে কিনার জন্য একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে । যে জিনিস মানে ভালো সে জিনিসের দাম সব সময় একটু বেশি থাকে । তবে আপনি চাইলে এই মোবাইলটিকে অফিশিয়ল অথবা আনঅফিসিয়াল যেকোনটাই কিনতে পারবেন ।
অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে ?
বর্তমান এই সময়ে মানুষ কিন্তু ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে বেশি পছন্দ করে । তবে আপনি কিন্তু এই মোবাইলটি কেউ ঘরে বসেই ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই মোবাইল সম্পর্কে দেখে এই মডেলটিকে অর্ডার করতে পারবেন । যদি অনলাইন থেকে কিনতে চান তাহলে বাংলাদেশের হুয়াওয়ের অফিশিয়াল পেইজ রয়েছে সেখানে হুয়াওয়ের সব মডেল পাওয়া যাবে । আপনি চাইলে সেখান থেকেও এ মডেলটি কিনতে পারবেন । তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন যে পেইজটি থেকে আপনি কিনতে চাচ্ছেন সেই পেইজটি হুয়াওয়ের অফিশিয়াল পেইজ কিনা । নয়তো আপনি ঠকটেও পারেন ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন