বর্তমান সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি ব্র্যান্ড হচ্ছে হুয়াওয়ে । কেননা এই মোবাইলটি মিডিয়াম প্রাইজের মধ্যে খুবই ভালো মানের পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে । উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পাই Huawei Mate 40 E মডেলটিকে । হুয়াওয়ে অন্যান্য মডেল গুলো থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে ডিভাইসটিতে । প্রিমিয়াম ডিজাইন এবং আকর্ষনীয় লুক স্মার্টফোনটি ভ্যালু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে । মিডিয়াম প্রাইজের বাজেটে আওতামুক্ত রাখা হয়েছে এই মডেলটিকে । মোবাইলটি ব্যবহার করে অনেকেই ইতিবাচক মতামত পোষণ করেছে । একটু মিডিয়াম প্রাইজের ভিতরে ভালো মানের স্মার্টফোন কেনার জন্য যাদের আগ্রহ বেশি এই মডেলটি তাদের জন্য মার্কেটের সেরা । মোবাইলটি ব্যবহার করে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে ? ফাস্টেস্ট স্পিড পাওয়া যাবে কিনা ? গেম খেলা যাবে কিনা ? এক নজরে জেনে নেওয়া যাক ।
ক্যামেরা
স্মার্টফোনটিতে ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলোকে গোলাকৃতি আকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে ট্রিপল রেয়ার ক্যামেরা । ওয়াইড অপশনে রাখা হয়েছে 64 মেগাপিক্সেল এর একটি পিডিএফ ক্যামেরা , টেলি ফটোক্যামেরায় 8 মেগাপিক্সেল দিয়ে অপটিক্যাল জুম এর সাহায্যে ছবি তোলা যাবে । আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরায় রাখা হয়েছে 16 মেগাপিক্সেল এর একটি আকর্ষণীয় ক্যামেরা । সুন্দর সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় রয়েছে 13 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে যুক্ত রাখা হয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট । 1080 পিক্সেলে যেকোন ভিডিও ফুল এইচডি মুডে উপভোগ করা যাবে । প্রাইমারি এবং সেলফি ক্যামেরা গুলো দিয়ে স্বল্প আলোর পাশাপাশি রোদেও ভালো মানের ইমেজ ক্যাপচার করা যাবে । ক্যামেরা গুলোতে অপটিক্যাল জুম , পানোরামা এবং এইচডিআর এর মতো জনপ্রিয় ফিচার পাওয়া সম্ভব ।
ডিসপ্লের ধরন
ওএলইডি ক্যাপাসিটিভ টাইপ এলসিডি ব্যবহার করা হয়েছে যারা আকার 6.5 ইঞ্চি । অনেকটা বৃহৎ আকৃতির এবং আকর্ষণীয় সাইজের ডিসপ্লেটি মানে ভালো এবং টেকসই । স্মার্টফোনটির ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে 90 Hz । 1080×2376 পিক্সেল রেজুলেশনের সাথে রয়েছে ডিসপ্লে ঘনত্ব 402 পিপিআই ডেনসিটি । 89.3 পার্সেন্ট স্কিন টু বডির রেটিও রেট এর সাথে মনমুগ্ধকর ডিসপ্লেটি সবার পছন্দ হবে বলে আমি মনে করি । ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট 90 হার্জ থাকার কারণে দ্রুত টাচস্ক্রিনের কার্যক্ষমতা এবং গেমিং মুভমেন্ট ভালো পাওয়া যাবে । ডিসপ্লে রেজুলেশন ঠিকঠাক থাকার কারণে 4k এইচডি মোড পজিশনে যেকোন ভিডিও দেখা যাবে । তবে ব্রাইটনেস এর কিছুটা ঘাটতি দেখা যায় , স্বল্প আলোতে ভালো ফিচার পাওয়া গেলেও রোদে যাওয়ার পর কিছুটা নরমাল মনে হয় ।
অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রসেসর
মোবাইলটির অপারেটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যারগুলোকে কোম্পানিটির নিজস্ব উদ্ভাবিত এন্ড্রয়েড ভার্সন 10 দ্বরা পরিচালিত । মোবাইলটির প্রসেসরে ব্যবহার করা হয়েছে Octa-Core (2×2.86 GHz cortex-A76 & 2×2.36 GHz cortex -A76 & 4×1.95 GHz cortex -A55) মডেল , চিপসেট লক্ষ করা যায় Kirin 990E 5G , Mali G76 মডেলের জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে । অপারেটিং সিস্টেমে কিন্তু গুগল এর উপস্থিতি দেখা যাবে না তার কারণ হলো তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম সার্ভিস থাকার কারণে গুগোল এর প্রয়োজন হয় না । অপরদিকে সফটওয়্যার ইন্সটল করার জন্য পাওয়া যাবেনা প্লে স্টোর । এখন কথা হল যদি প্লেস্টোর না পাওয়া যায় তাহলে কিভাবে সফটওয়্যার এবং অ্যাপস ডাউনলোড করবেন ? টেনশনের কোন কারণ নেই তাদের নিজস্ব এক ক্যালরি রয়েছে সেখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারটি নামিয়ে নিতে পারবেন । এই সময় এসে এই মোবাইলটি এন্ড্রয়েড ভার্সন 10 দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এটা একটি হতাশার কারণ হতে পারে হুয়াওয়ে লাভারদের জন্য ।
বডি ডিজাইন
আয়তনের দিক দিয়ে মোবাইলটি ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া যাবে । 6.24 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য , 2.85 ইঞ্চি প্রস্থ এবং 0.35 ইঞ্চি পুরুত্ববিশিষ্ট মডেলটি আকারে অনেকটাই বিধ্বংসী । 188 গ্রামের এই মডেলটিকে মার্কেটে কালো , সাদা এবং সিলভার কালার এ পাওয়া যাবে । বডি প্রটেকশনের জন্য রয়েছে কর্নিং গরিল্লা গ্লাস । IP53 প্রটেকশন এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । ডিভাইসটির বডির সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে শক্তপোক্ত কর্নিং গরিল্লা গ্লাস । বিল্ড কোয়ালিটি এবং বডি ডিজাইন খুবই চমৎকার এবং নমনীয় । সম্পূর্ণ বডিটিকে অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম দ্বারা আবদ্ধ করা হয়েছে । বডি ডানপাশে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন এবং ভলিউম বাটন পাওয়া যাবে । বামপাশে দেখা মিলবে সিম কার্ড এবং মেমোরি কার্ড স্লটের । আন্ডার বডিতে ক্যামেরা গুলোকে গোলাকৃতি আকারে সাজিয়ে রাখার জন্য এই মডেলটিকে অন্যান্য মডেল গুলো থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রমী বলে মনে হবে ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন সিস্টেম
আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এই ফোনটিতে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক কানেকশন অপশন রাখা হয়েছে । এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু না হলেও তবে আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যেই তা চালু হয়ে যাবে । দেশের যেকোনো স্থানেই বর্তমান সময়ের অন্যতম নেটওয়ার্ক 4 জি উপভোগ করা যাবে । ন্যানো সিম এর পাশাপাশি ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে ডুয়েল সিম । ফোরজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে 42.2 এমবিপিএস সংযোগে রাখা যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক এর ভার্সনগুলো হল 1,2,3,4,5,6,7,8,9,12,17,18,19,20,26,34,38,39,40,41 । স্মার্টফোনটিতে রাখা হয়েছে জিপিআরএস সিস্টেম ।
তারবিহীন নেটওয়ার্ক গুলোকে স্বাচ্ছন্দ্যভাবেই ফুল স্পিডে ব্যবহার করা যাবে । 5.2 মডেলের ব্লুটুথ , ডুয়াল ব্যান্ড , wifi-direct , ওয়াইফাই হটস্পট , এনএফসি ইত্যাদি ব্যবহার করা গেলেও পাওয়া যাবেনা এফএম রেডিও ব্যবহারের সুযোগ । ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট এর পাশাপাশি সুযোগ রয়েছে ওটিজি ক্যাবল ব্যবহারের ।
স্টোরেজ
মোবাইলটির মেমোরি কার্ডে রয়েছে ন্যানো মেমোরি কার্ড স্লট । মোবাইলটির ইন্টার্নাল মেমোরিতে 4 জিবি রেমের পাশাপাশি রোম ব্যবহার করা হয়েছে 128 জিবি এবং 256 জিবি । মোবাইলটির স্টোরেজের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে হাই লেভেলের স্টোরেজ । দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়াদি সহকারে মুভি এবং নাটক বেশি করে সংগ্রহ করা যাবে । এছাড়াও রয়েছে মোবাইলটি দ্রুতগতিতে ব্যবহারের সুবিধা । মেমোরি পারফরম্যান্স খুব ভালো থাকার কারণে স্মার্টফোনটি ব্যবহারে হাই স্পীড উপভোগ করা যাবে । তবে এখানে মেমোরি কার্ড স্লট অনেকটা পুরনো ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে । এই মুহূর্তে আসলে এতটা পুরনো ভার্সন আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল । এছাড়াও কার্ড স্লটে পাওয়া যাবে ন্যানো মেমোরি । ব্যবহারকৃত কার্ড স্লট এর বিষয়টি বাদে অন্যান্য বিষয়গুলো আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এবং আমি আশা করি মেমোরি পারফরম্যান্স প্রায় সকলের মন জোগাতে সক্ষম হবে ।
ব্যাটারি পারফরমেন্স
নন রিমুভেবল ব্যাটারি টাইপের ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 4200 এমএএইচ পাওয়ার । মোবাইলটির ব্যাটারীতে মোটামুটি মিডিয়াম কোয়ালিটি পাওয়ার রয়েছে যা ফুল চার্জে টুকটাক ব্যবহারে অনায়েসেই একদিন চলে যাবে । একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এই ফোনটিতে ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে । ফোনটির সাথে যে চার্জার পাওয়া যাবে এবং ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেমে দ্রুত গতিসম্পন্ন অর্থাৎ 40 ওয়াটে চার্জ হবে । তারবিহীন অথবা ওয়্যারলেস সিস্টেমগুলো থাকার কারণে ব্যাটারি ব্যাকআপ এর ভ্যালু অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে । 5 ওয়াট গতিতে এই মোবাইলটি থেকে অন্য একটি মোবাইলে অর্থাৎ রিভার্স চার্জিং সিস্টেমে পাওয়ার ডেলিভারি করা যাবে । এখন অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে থাকা পাওয়ার নিয়ে । এ বাজেটের অন্যান্য মডেলগুলোতে ব্যাটারি পাওয়ার আরো ভালো হয়ে থাকে কিন্তু এখানে পাওয়া যাবে 4200 mAh পাওয়ার । এদিকে আরেকটু দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হয়তো ব্যাটারি ব্যাকআপে আরেকটু স্ট্রং কনফিডেন্স তৈরি হতো ।
সিকিউরিটি
সিকিউরিটি সিস্টেম বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনে থাকা একটি অন্যতম আকর্ষণ । নিজেদের তথ্যের প্রাইভেসি এবং অন্যের হাত থেকে মোবাইলটিকে রক্ষা করার জন্য প্রায় অনেকেই সিকিউরিটি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি । বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত এবং ব্যবহার্য সিকিউরিটি সিস্টেম হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফেইস আনলকিং সিস্টেম । ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মত জনপ্রিয় একটি সিকিউরিটি পদক্ষেপ রাখা হয়েছে এই স্মার্টফোনটিতে । স্মার্টফোনটির রেয়ার মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যা অদ্বিতীয়ভাবে সনাক্ত করতে সাহায্য করে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি অনেকটাই দ্রুত সনাক্ত করতে সক্ষম । রেয়ার মাউন্টেডে সেন্সরটি সেট করার ফলে ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করতে ইজি ফিল করবে । এক্সেলেরোমিটার , প্রক্সিমিটি , গায়রো এবং কম্পাস এর মত অন্যান্য সিকিউরিটি পদক্ষেপগুলো রাখা হয়েছে । কেবলমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নয় এর পাশাপাশি যে সিকিউরিটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে সেগুলো অনেকটা ফাস্টেস্ট গতিতে সনক্ত করতে যোগ্য বলে মনে হয়েছে আমার কাছে ।
গেমিং পারফরমেন্সের জন্য কতটা যোগ্য ?
এই মোবাইলটি গেম খেলার জন্য যোগ্য বলে আমার মনে হয়েছে । কেননা মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর এর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত মানের ব্যাটারি এবং বেশি পরিমাণে স্টোরেজ । তবে বেশিক্ষণ গেম প্লে করার ক্ষেত্রে মোবাইলটি গরম হয়ে যেতে পারে । আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা স্মার্টফোন দিয়ে গেম প্লে করতে পছন্দ করি । আর তাদের মধ্য থেকে যারা গেমপ্লে করার জন্য এই মডেলটিকে টার্গেট করেছেন তাদের অবশ্যই এটা জানা উচিত যে গেমপ্লে করার জন্য এই স্মার্টফোনটি পারফেক্ট । মেমোরি পারফরম্যান্স এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন ভালো থাকার কারণে অনলাইন প্রথম সারির গেমগুলোকে খুব ভালোভাবেই খেলা যাবে । তবে এখানে একটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে হাই কোয়ালিটির পাওয়ার না থাকায় দীর্ঘক্ষন গেমপ্লে করার সুযোগ থাকছে না । দীর্ঘসময় গেমপ্লে করার ক্ষেত্রে ডিভাইসটির খুব বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ।
রিলিজের তারিখ এবং প্রাইস
Huawei Mate 40 E মডেলটিক 18 মার্চ , 2021 দেশের মার্কেটগুলোতে প্রথমবারের মতো রিলিজ করা হয় । মোবাইলটির বর্তমান বাজার মূল্য বাংলাদেশে ৳60,000 টাকা । অফিশিয়ল মডেলের পাশাপাশি আনঅফিসিয়াল রূপেও এই মডেলটিকে পাওয়া যাবে । হুয়াওয়ের শোরুম ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে মোবাইলটিকে পাওয়া
যাচ্ছে । তবে আপনি চাইলে ঘরে বসেই কোম্পানিটির অফিশিয়াল পেজ থেকে পণ্যটি অর্ডার করতে পারবেন । সেক্ষেত্রে আপনার খরচ কিছুটা হলেও বাড়তে পারে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন