আমাদের ভিতরে যারা একটু উন্নত মানের স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনতে চাচ্ছি তাদের জন্য এই মোবাইলটি হতে পারে মার্কেটের সেরা । আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই আছে যারা হাই মিডিয়াম কোয়ালিটির মোবাইল কিনতে চাচ্ছে । তাদের জন্যই একটু মিডিয়াম প্রাইজের ভিতরে একটি ভালো মানের স্মার্টফোন অফার করলো হুয়াওয়ে । হুয়াওয়ের স্মার্টফোন গুলোর মধ্যে P50 মডেলটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় । হুয়াওয়ে তাদের জন্য মার্কেটে এই মডেলটি নিয়ে আসলো । Huawei P50 মডেলটি চায়নার বাজারসহ গ্লোবাল মার্কেটে অলরেডি রিলিজ করা হয়েছে । দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনে সজ্জিত করা হয়েছে মডেলটিকে । মোবাইলটি পারফরম্যান্স কেমন দিবে ? নতুন কি কী আকর্ষণ রয়েছে এই স্মার্টফোনটিতে? আসুন এ বিষয়ের উপর আলোচনা করা যাক ।
ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল স্টোরেজ
Huawei p50 মডেলটির স্টোরেজে পাঁচটি ভেরিয়েন্ট রয়েছে । হুয়াওয়ে মডেল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেমোরি ভেরিয়েন্ট দেখা যায় এই মডেলটির ভিতরে । হুয়াওয়ে পি ফিফটি ফোনটির মেমোরিতে 8 জিবি রেম এর পাশাপাশি রয়েছে 128 জিবি রোম । ন্যানো মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে । ওটিজি ক্যাবলের সাহায্যে 256 জিবি পর্যন্ত রোম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । এই ফোনটিকে ফাস্টেস্ট স্পিডে ব্যবহার করা যাবে। কেননা এর স্টোরেজে মোটামুটি ভালই রেম এবং রোম ব্যবহার করা হয়েছে । চাইলে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় অনেক কিছুই এই ফোনটিতে সংগ্রহ করে রাখা যাবে ।
মেমোরি পারফরম্যান্স অনেকটা ভালো হলেও যে মেমোরি স্টোরেজ টাইপ ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অনেকটা পুরনো । এক্ষেত্রে আরেকটু উন্নতির প্রয়োজন ছিল । এ বিষয়টি বাদে বাকি সবকিছুই ঠিকঠাক রয়েছে বলে মনে হয় আমার কাছে ।
প্রাইমারি ক্যামেরা সেটআপ
হ্যান্ডসেটটির ক্যামেরা সেটআপে ত্রিপল রেয়ার ক্যামেরার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । ওয়াইড ক্যামেরায় রয়েছে আকর্ষণীয় একটি ক্যামেরা যাতে 50 মেগাপিক্সেল রয়েছে, আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরায় রয়েছে 13 মেগাপিক্সেল এবং ম্যাক্রো ক্যামেরায় 12 মেগাপিক্সেল এর একটি উজ্জ্বলময় ক্যামেরা রয়েছে । ডিএসএলআর, এইচডিআর এবং অটোফোকাস মোডে ছবি ক্লিক করা যাবে । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে যুক্ত রয়েছে রেয়ার এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট । সেলফি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় 13 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা রয়েছে । ডিসপ্লের স্ক্রীন দিয়ে 1080 পিক্সেল ফুল এইচডি ভিডিও দেখা যাবে ।
অন্যান্য মডেল গুলো থেকে এই মডেলটির ক্যামেরা সেটআপ অনেকটা ভিন্নতা রয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরা গুলোকে ত্রিভুজাকৃতি সাজিয়ে রাখা হয়েছে । অপর দিকে এলইডি ফ্ল্যাশ এর সাথে একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে । এমন ক্যামেরা লুক অন্যান্য মডেলগুলোতে খুব কমই দেখা যাবে ।
বডি ডিজাইন
কোয়ালিটির দিক দিয়ে সুবিচার করলে এই মোবাইলটিকে হাই মিডিয়াম কোয়ালিটির দিকে রাখা যায় । স্মার্টফোনটির বডির দৈর্ঘ্য 156.50 মিলিমিটার , 73. 80 মিলিমিটার প্রস্থ এবং 7.62 মিলিমিটার পুরুত্ব লক্ষ করা যায় । ফোনটিকে কালো,সাদা এবং সোনালী কালার সহকারে ভিন্ন তিনটি কালারে পাওয়া যাবে । ফোনটির ওজন কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে 181 গ্রাম।
হুয়াওয়ের এই মডেলটিতে ধুলোবালি এবং পানি রোধক ব্যবস্থা রয়েছে । তার মানে এই নয় যে আপনি সখের বশে স্মার্টফোনটিকে বেশিক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন । স্মার্টফোনটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানিরোধক ব্যবস্থাটি দিয়ে থাকবে । মোবাইলটি সর্বোচ্চ 30 মিনিট পানিতে টিকে থাকবে । মোবাইলটির বডি ডিজাইন আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনেকটাই ভাল লেগেছে তবে আমি এটাও আশা করি যে আপনাদের কাছে অনেকটা ভালো লাগবে ।
ডিসপ্লে এবং প্রসেসর
6.50 ইঞ্চি আকর্ষণীয় ডিসপ্লের সাথে রয়েছে এলসিডি রেজুলেশন 1224×2700 পিক্সেল । এলসিডির ঘনত্ব 458 পিপিআই এর সাথে থাকছে দ্রুত স্পর্শগামী টাচ স্ক্রীন । মোবাইলটির প্রসেসরে দেওয়া হয়েছে অক্টা- কোর মডেল । চিপসেটে লক্ষ্য করা যায় কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন 888 । অপারেটিং সিস্টেমে তাদের নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড হারমনি ওএস টু মডেল ব্যবহার করেছে ।
ডিসপ্লের জন্য এই মোবাইলটি কিন্তু অনেকটাই জনপ্রিয় । কেননা এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় মানের ডিসপ্লে যা দেখতে অনেকটা ভালো এবং মানে অনেকটা পোক্ত । ডিসপ্লেতে থাকছে 120 হার্জ এর রিফ্রেশ রেট । অপারেটিং সিস্টেম তাদের নিজস্ব । তার কারণ হচ্ছে তারা অপারেটিং সিস্টেমের জন্য গুগলের পারমিশন দিয়ে থাকে না বা ব্যবহার করেনা তাদের নিজস্ব তৈরি অপারেটিং সিস্টেম কি তা জানো দিয়ে থাকে অথবা ব্যবহার করে । এখন হয়তো আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগতেই পারে যেখানে যদি প্লে স্টোর ব্যবহার না করা যায় তাহলে আমরা অ্যাপ কিভাবে ইন্সটল করব ? অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য তাদের নিজস্ব গ্যালারি রয়েছে এটার জন্য কোন সমস্যা হবে না ।
নেটওয়ার্কিং সিস্টেম
তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো যেমন রেডিও, জিপিএস, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই ,হটস্পট নেটওয়ার্কগুলো স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ফুলস্পিডে চালানো যাবে । বর্তমান সময়ের উন্নত মানের নেটওয়ার্ক 4 জি চালানো যাবে অনায়াসেই । nano-sim কার্ড এর পাশাপাশি ডুয়েল সিম কার্ড চালানো যাবে । 3 জি নেটওয়ার্ক এর পাশাপাশি ফোরজি নেটওয়ার্ক চালানো যাবে ।
স্মার্টফোনটি দিয়ে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক স্পিড ব্যবহার করা যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক স্পিড এর সর্বোচ্চ 42 mbps স্পিড উপভোগ করা যাবে । তারবিহীন নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে ব্যবহার করা যাবে না এফএম রেডিও এবং ইনফারেট পোর্ট । এগুলো ছাড়া বাকি সবগুলো ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যাবে তার মধ্যে রয়েছে 5.1 মডেলের ব্লুটুথ , wifi-direct , ওয়াইফাই হটস্পট , জিপিএস ইত্যাদি । এর পাশাপাশি ইউএসবি ক্যাবল ব্যবহার করা যাবে type-c 3.1 মডেলের এবং ওটিজি ক্যাবল ।
সিকিউরিটি এবং ব্যাটারি
আমরা অন্যের হাত থেকে সুরক্ষা রাখতে সিকিউরিটি পদক্ষেপ ব্যবহার কর থাকি । আমরা এই মোবাইলটিতে ঠিক সেম কোয়ালিটির সিকিউরিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব । প্রক্সিমিটি, একসিলোমিটার ,গায়রোস্কোপ, এবং মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর মতো আকর্ষণীয় সব সিকিউরিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে । ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 4100 এমএএইচ পাওয়ার । মোবাইলটির সাথে যে চার্জার পাওয়া যাবে সেই চার্জার দিয়েই দ্রুতগতিতে চাঁজ হবে ।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি পারফরম্যান্স সবকিছু ভালো লাগলেও ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে থাকা 4100 এমএএইচ পাওয়ার হুয়াওয়ে লাভারদের কাছে অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল । প্রায় আইফোন এর সমতুল্য একটি স্মার্টফোন যেখানে মোবাইলের ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যাবে কেবলমাত্র 4100 এমএএইচ পাওয়ার এটা হয়তো অনেকেই মেনে নিতে পারবে না এবং এটি একটি হতাশার কারণ বলে মনে হতে পারে ।
গেমিং পারফরম্যান্স কেমন হবে ?
মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে গেমিং পারফরমেন্সে ভাল করবে এই আশা করা যায় । অপরদিকে বেশি স্টোরেজ ব্যবহার করার কারণেও গেম খেলতে কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না । মিডিয়াম কোয়ালিটির ব্যাটারি ব্যবহার করার কারণে দীর্ঘক্ষণ গেমিং সার্ভিস দিবে না ।
আমরা অনেকেই গেমপ্লে করার জন্য স্মার্টফোনকে বেছে নিয়ে থাকি । আবার কেউ কেউ এই মোবাইলটির উপর টার্গেট ছুড়ে মেরেছি গেম খেলার জন্য । তাদের জন্য একটি খুশির খবর হচ্ছে এই স্মার্টফোনটিকে আপনি চাইলে সকল ধরনের গেম হোক সেটা অফলাইন নয়তো অনলাইন উন্নত গ্রাফিক্সের মাধ্যমে খেলতে পারবেন । গেম খেলার জন্য অনেকটাই ক্লিয়ার পারফরম্যান্স পেয়ে যাবেন এই মোবাইলটির ভিতরে । তবে একটি সমস্যার সম্মুখীন হবেন সেটি হল এখানে পাওয়া যাবেনা লং লাইফ টাইম এর ব্যাটারি পারফরম্যান্স । যে কারণে স্মার্টফোনটির দিয়ে সম্পূর্ণ একদিন পাওয়া যাবেনা গেম প্লে করার জন্য ।
রিলিজ তারিখ এবং প্রাইস
হুয়াওয়ে পি ফিফটি মডেলের এই মোবাইলটি এখন পর্যন্ত মার্কেটে লঞ্চ হয়নি তবে অতি শীঘ্রই মার্কেটে রিলিজ করা হবে এই মোবাইলটি এমনটাই বলা হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে । পারফরম্যান্স থেকে বলা যায় মোবাইলটির মূল্য 60 থেকে 65 হাজারের মধ্যে থাকতে পারে । অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে এখানে হয়তো দাম অনেকটা বেশি কিন্তু এই ধারণাটা আসলেই ভুল যে জিনিসের মান ভালো সে জিনিস একটু বেশি টাকা দিয়ে আমাদের সচরাচর কিনতে অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে ?
হয় । এ স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মডেলগুলো থেকে একটু বেশি বলা যেতে পারে যার কারণে এটিকে একটু বেশি দামে নির্ধারণ করা হয়েছে । পারফরমেন্সের দিক দিয়ে বিচার করলে এই মোবাইলটির গুণগত মান অনেকটাই চওড়া ।
অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে ?
এই সময়ে কেবলমাত্র স্মার্টফোনে নয় অনলাইন থেকে যাবতীয় এবং প্রয়োজনীয় সকল কিছুই অর্ডার করা যাবে । এখন মানুষ ঘরে বসেই মার্কেট করতে বেশি পছন্দ করে থাকে । তবে আপনি যদি অনলাইন থেকে এই মোবাইলটিকে অর্ডার করতে চান তাহলে বাংলাদেশে হুয়াওয়ে এর অফিশয়াল পেইজ রয়েছে সেখানে হুয়াওয়ের সকল মডেল পাওয়া যাবে সাথে এই মডেলটিকেও । অফিসিয়াল পেইজ থেকে আপনি এই মডেলটিকে অর্ডার করতে পারবেন তবে অনলাইন থেকেই মোবাইলটি অর্ডার করার জন্য আপনাকে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হবে সাথে ডেলিভারি ফি ।
স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমার মতামত
স্মার্টফোনটির মূল্যও অনেকটা আইফোনের কাছাকাছি হওয়ার কারণে আপনাদের অনেকেরই ধারণা একটি ভালো পারফরর্মেন্স রয়েছে আসলে ধারণাটি সত্যি । যে জিনিসের মানে একটু ভালো সেই জিনিসটা একটু বেশি দাম দিয়ে কিনলেও ভালো পারফরর্মেন্স পাওয়া যাবে । এটা হয়তো আমরা সবাই জানি । এই মোবাইলটির সকল দিক দিয়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে । ক্যামেরা পারফরম্যান্স , মেমোরি পারফরম্যান্স , ব্যাটারি লাইফ টাইম মোটামুটি সবকিছুই অনেক ভালো । এই স্মার্টফোনটি কেনার জন্য আগ্রহ অনেকেরই বাড়বে । ইতিমধ্যেই অনেক ব্যবহারকারী রয়েছে যারা মোবাইলটি ব্যবহার করে লাভবান হয়েছে ।
Good news
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন