দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোনের চাহিদা ঠিক ততই বাড়তে চলেছে । আবার যদি সুলভ মূল্যে ফোনগুলোকে হাতের কাছে পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই । ইনফিনিক্স কোম্পানিটি বহুল পরিচিত একটি ব্রান্ড । নিত্যনতুন ভালো মানের স্মার্টফোনের রিলিজের মাধ্যমে নিজেদের জায়গাটা শক্তপোক্তভাবেই ধরে রেখেছে । স্বল্প বাজেটের মধ্যে ভাল পারফরমেন্স দেওয়ারর জন্য ইনফিনিক্সের চাহিদা ব্যাপক । 2021 চলতি বছরে ব্র্যান্ডটি দারুন ফিচারের সাথে মার্কেটে কিছু মডেল রিলিজ করেছে । তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য একটি স্মার্টফোন Infinix Smart 5A । মডেলটি ক্রয় করার পূর্বে আমাদেরকে অবশ্যই এর ফিচার সম্পর্কে ধারণা জানা প্রয়োজন । ইনফিনিক্সের গ্রাহকদের জন্য এই মডেলটি অনেকটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি আশা করি । মোবাইলটিতে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে ? ফাস্টেস্ট স্পিডে মোবাইলটিকে চালানো যাবে কিনা ? কিরকম বাজেটের মধ্যে পাওয়া যাবে ফোনটিকে ? বিস্তারিত জানা যাক ।
বডি ডিজাইন
মোবাইলটির বডিবিল্ডারের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দেখা যায় বডিতে গ্লাস ফ্রন্ট, প্লাস্টিক ব্যাক এবং প্লাস্টিকের তৈরি ফ্রেমে আবদ্ধ । বডিটির ডানপাশে লক্ষ্য করা যায় পাওয়ার অফ বাটন এবং ভলিউম বাটনের উপস্থিতি । 183 গ্রামের এই মোবাইলটি হাতে নিয়ে অনেকটাই আরামদায়ক অনুভব হবে । বডিটির বামপাশে হাইব্রিড এবং মেমোরি কার্ড স্লট রয়েছে । মডেলটির বডিবিল্ডে রয়েছে গ্লাস ফ্রন্ট , প্লাস্টিক ব্যাক এবং আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে প্লাস্টিক ফ্রেমে । বডির প্রোটেকশনের জন্য গরিলা গ্লাসের উপস্থিতি চোখে পড়েনি যার কারনে ব্যবহার ক্ষেত্রে অনেকটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । কারন হাত থেকে পড়ে গিয়ে ফোনটি ভেঙে যাওয়ার রিস্ক রয়েছে । মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই মডেলটিকে নীল , সবুজ এবং কালো কালার ছাড়াও আরো বিভিন্ন রঙে পাওয়া যাবে । বডিটিতে ব্যবহারকৃত প্রায় সবকিছুই দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো ।
ডিসপ্লে এবং প্রসেসর
গুগোল প্রতিনিয়তই তাদের ভার্সনগুলোকে আপডেট করে থাকে । রিপোর্ট অনুযায়ী বলা যায় এই ফোনটি এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 দ্বারা পরিচালিত । মোবাইলটির প্রসেসরে ব্যবহার করা হয়েছে 1.8 GHz Quad-Core । মিডিয়াটেক হেলিও A22 মডেলের সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে এই স্মার্টফোনটিতে । মোবাইলটির সফটওয়্যার এর কার্যক্ষমতা এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর আওতাভুক্ত । আইপিএস এলসিডি ক্যাপাচিতিভ টাইপ ডিসপ্লে রয়েছে যার সাইজ 6.52 ইঞ্চি । প্যানেলটিতে সাপোর্ট করবে 16 মিলি কালার । এলসিডি প্যানেলটিতে রয়েছে ভালো মানের বেজেল লেসের পরিমান এবং ভি টাইপ নচ ডিসপ্লের উপস্থিতি দেখা যায় । ডিসপ্লের ঘনত্ব রয়েছে 264 পিপিআই ডেন্সিটি । 500 নিটস ব্রাইটনেস এর পাওয়ার খুবই ভাল তবে রোদে একটু স্বল্পতা দেখা দিবে । ব্রাইটনেস ফিচারে পাওয়া যাবে আই কেয়ার অপশন । ডিসপ্লে পজিশনের যে দিকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল সেটি হচ্ছে ডিসপ্লে রেজুলেশন । 720×1560 পিক্সেল রেজুলেশনে শার্পনেস বিদ্যমান ।
ক্যামেরা
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ দেওয়া হয়েছে । 13+2 মেগাপিক্সেলের দুইটি ক্যামেরা রয়েছে প্রাইমারি ক্যামেরায় । একথা বলাই যায় যে বাজেটের উপর লক্ষ্য রেখে মোবাইলটি ক্যামেরা পারফরমেন্সকে ততটা খারাপ বলা যায়না । সেলফি তোলার সুবিধার জন্য মোবাইলটির ফ্রন্ট ক্যামেরায় 8 মেগাপিক্সেল এর একটি রেয়ার ক্যামেরা রয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত রয়েছে এলইডি পানোরামা ফ্ল্যাশ লাইট । মুভি,নাটক ছাড়া যে কোন ভিডিও ফুল এইচডি মুডে 1080 পিক্সেলে দেখা যাবে । ক্যামেরা গুলোর বৈশিষ্ট্য মান বিচার করলে ওয়াইড সেন্সরের অবস্থিত 13 মেগাপিক্সেলের জায়গায় প্রয়োজন ছিল 15 মেগাপিক্সেলের এবং depth সেন্সরে 5 মেগাপিক্সেল দিলে গর্জিয়াস লুক ধারণ কোনো ব্যাপার ছিল না । প্রাইমারি ক্যামেরাগুলো দিয়ে 3264×2448 পিক্সেল রেজুলেশনে ইমেজ তোলা যাবে । রেজুলেশন ভালো হওয়ার কারণে ছবি তোলার পাশাপাশি খুব ভালো মানের শর্ট ভিডিও করা যাবে ।
স্টোরেজ
প্রাইস এর ওপর সামঞ্জস্য রেখে মোবাইলটিতে 2 জিবি রেম এর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে 32 জিবি রোম । হাইব্রিড সিম কার্ড স্লট এর সাথে রয়েছে মাইক্রো এসডিএক্সি টাইপের মেমোরি কার্ড স্লট । ওটিজি ক্যাবল দিয়ে 256 জিবি পর্যন্ত রোম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । সিনেমা এবং নাটকের মতো প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্যাদি ফাইল বেশি করে সংগ্রহ করে রাখা যাবেনা । যার কারণ হলো ফোনটিতে অনেকটা মিডিয়াম লো কোয়ালিটির স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে বললেই চলে । মেমরি স্টোরেজে eMMc 5.1 মডেল ব্যবহার করা হয়েছে । এই বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে । 2 জিবি রেম থাকার কারণে হাই লেভেলের ফাস্টেস্ট স্পিড না পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি । উন্নত কোয়ালিটির অ্যাপস অথবা সফটওয়্যারগুলো এই মোবাইলটি দিয়ে রান করানো যাবে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে কিন্তু
দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়ে যায় । সফটওয়্যার গুলোকে ইন্সটল করা গেলেও স্পিডের দিকে তাকালে দেখা যাবে স্বল্পতা ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন
ফোনটি দিয়ে থ্রিজি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি 4জি এর মতো উন্নত মানের নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । nano-sim এর পাশাপাশি ডুয়েল সিম কার্ডে ব্যবহার করা যাবে ফোরজি নেটওয়ার্কে । 2জি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 1900 এমবিপিএস এবং থ্রিজি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ 2100 এমবিপিএস এর পাশাপাশি ফোরজি নেটওয়ার্ক এর সর্বোচ্চ 42.2 এমবিপিএস উপভোগ করা যাবে । ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, হটস্পট এর মত তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহার করা গেলেও চালানো যাবে না এনএফসি এবং এফএমরেডিও । 4 জি নেটওয়ার্ক অপশনের কিছু ভার্সন রয়েছে 1, 3 , 5 , 8 , 38 , 40 , 41 । এনএফসি এবং ইনফারেট পোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে না । ডিভাইসটি দিয়ে ব্রাউজিং করার ক্ষেত্রে জাভা ওয়েবসাইট এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে HTML5 । নেটওয়ার্ক সিস্টেমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি হচ্ছে দুইটি সিম চালু রেখেই 4 জি নেটওয়ার্কে স্মার্টফোনটিকে সংযুক্ত করে রাখা যাবে ।
সাউন্ড সিস্টেম
মোবাইলটির সাউন্ড সিস্টেম অনেকটাই ভালো বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । সাউন্ড টাইপ হিসেবে রয়েছে ভাইব্রেশন, mp3 এবং রিংটোন । মোবাইলটির বডির ঠিক নিচের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে লাউডস্পিকার এবং 3.5 mm জেক । অনেক সময় দেখা গেছে আমাদের ফোনের পিছনে লাউডস্পিকার অবস্থান করায় হন্টেড সাউন্ড সিস্টেম অর্থাৎ রিংটোন শোনা যায় না বা তুলনামূলকভাবে কোন স্থানে রাখার জন্য একটু কম শোনা যায় । কিন্তু এক্ষেত্রে লাউডস্পিকার ফোনটির বডির নিচের দিকে রয়েছে এখানে আশা করি কোন সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে না ।
ব্যাটারি
মোবাইলটিতে non-removable ব্যাটারি টাইপ ব্যবহার করা হয়েছে যার ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 5000mah মিডিয়াম কোয়ালিটির পাওয়ার । মোবাইলটির ব্যাটারিটি 10 ওয়াট দ্রুত চার্জ হবে । চার্জারটি দিয়ে মোবাইলে ফুল চার্জ হতে 3 ঘন্টা সময় নিবে । ফুল চার্জে ফোনটিকে অনলাইন ব্যবহারে সম্পূর্ণ একদিন চালানো যাবে । তারবিহীন সিস্টেম অথবা পাওয়ার ডেলিভারি কোন ব্যবস্থার তথ্য এখানে নেই । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেমের মাধ্যমে একটি ফোনের ব্যাটারি পারফরমেন্স অনেকটাই গর্জিয়াস ধারণ করে । আর যদি সেখানে থেকে যায় রিভার্স চার্জিং ডেলিভারির ব্যবস্থা তাহলে ব্যাটারি পারফরম্যান্স হাই কোয়ালিটি এবং ফাস্ট লেভেলের বলে আমাদের কাছে মনে হয় । কিন্তু এখানে ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম রাখা হলেও অন্যান্য তারবিহীন চার্জিং সিস্টেমের কোন আভাস পাওয়া যায়নি । ফাস্ট চার্জিং স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে কেবল মাত্র 10 ওয়াট । যেটা একটি ভালো মানের স্মার্টফোনের ব্যাটারি পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । এখানে নিম্নতম 15 ওয়াট রাখার প্রয়োজন ছিল ।
সিকিউরিটি সিস্টেম
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সিকিউরিটি পদক্ষেপ মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর আওতাভুক্ত রাখা হয়েছে মোবাইলটিকে । ডানপাশের রেয়ার মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট যা খুব দ্রুতই আনলক করতে সুবিধা হবে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়াও রয়েছে অ্যাক্সেলেরোমিটার ,প্রক্সিমিটি, গায়রো জনপ্রিয় সিকিউরিটি পদক্ষেপ । ব্রাউজিং সিস্টেমে রাখা হয়েছে html5 । স্মার্টফোনের ফিচার এবং সিগমেন্ট যাচাই করার জন্য আমাদের নজর বর্তমানে সিকিউরিটি সিস্টেমের উপর অনেকটা নির্ভর করে থাকে । ভালো মানের স্মার্টফোনগুলোতে ইউনিক অথবা নতুন নতুন জনপ্রিয় সিস্টেমগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে । তাদের মধ্যে রয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম , ফেইস আনলকিং সিস্টেম ইত্যাদি । এবার দেখা যায় এই জনপ্রিয় সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো ব্যবহার করা হয়েছে ইনফিনিক্সের এই নতুন মডেলটিতে । তার মানে দাঁড়ায় সিকিউরিটি সিস্টেমের জন্য এই ডিভাইসের পারফরম্যান্স অনেকটা ভালোই ।
গেমিং পারফরম্যান্স কেমন দিবে ?
গেমিং এর জন্য এই মোবাইলটি তেমন একটা ভালো পারফরর্মেন্স করবে না । প্রথমত মোবাইলটির প্রসেসরে কোন গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়নি । দ্বিতীয়ত মোবাইলটি স্টোরেজের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই 2 জিবি রেম এবং 32 জিবি রোম রয়েছে যা অনলাইন গেম খেলার জন্য যোগ্য নয় । আমরা প্রায় অনেকেই অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য স্মার্টফোনকে টার্গেট করে থাকি বা অনেকে খেলেও থাকি । এখন কথা হচ্ছে অনলাইন প্রথম সারির গেমগুলোকে ভালো মানের গ্রাফিক্সের সাথে খেলার জন্য একটুও ভাল মানের অথবা উন্নত পারফরম্যান্সের স্মার্টফোনের প্রয়োজন হবে সেটা আমাদের সকলেরই জানা । অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য আমরা যারা এই মোবাইলটিকে টার্গেট করেছি তাদের জন্য আমার মতে এই মডেলটি ততটা ভালো মানের পারফরম্যান্স দিতে পারবে না । তার কারণ হচ্ছে নেই ভালো গেমিং গ্রাফিক্স জিপিইউ , মেমোরি পারফরম্যান্স । গেম খেলা যাবে তবে অফলাইন মুডের গেমগুলো ভালো পারফরর্মেন্স দেবে । ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করা গেলেও গেম খেলার জন্য থাকছে না ভালো মুভমেন্ট ও উন্নতমানের গ্রাফিক্স ।
রিলিজের সময় এবং প্রাইস
10 আগস্ট, 2021 মার্কেটগুলোতে এই মডেলটি রিলিজ করা হয় । মিডিয়াম কোয়ালিটির ভিতরে ভালো মানের এই মোবাইলটি পাওয়া যাচ্ছে সুলভ মূল্যে । দেশের বাজারে মোবাইলটির বাজার মূল্য ৳7,500 টাকা । আনঅফিসিয়াল মডেলটির মূল্য কিছুটা কম হতে পারে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন