মার্কেটপ্লেসগুলোতে অন্যান্য মডেলগুলো থেকে পিছিয়ে নেই ইনফিনিক্স । নতুন নতুন আপডেট মার্কেটে রিলিজ করার মাধ্যমে নিজেদের জায়গাটা ধরে রাখতে সফল হয়েছে ইনফিনিক্স কোম্পানিটি । স্বল্পমূল্যের ভিতরে ভালো মানের ফিচার দেওয়ার জন্য তাদের মডেলগলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ইনফিনিক্স কোম্পানিটি মার্কেটের নতুন মডেল রিলিজ করলো । ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের নতুন এই মডেলটির নাম ইনফিনিক্স স্মার্ট এইচডি । ইনফিনিক্স গ্রাহকদের জন্য এই বিষয়টি অনেকটাই আনন্দের । Infinix Smart HD ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের আওতাভুক্ত একটি মডেল । আমরা যারা কম খরচে ভালো মানের মোবাইল কিনতে চাচ্ছি এ মডেলটি শুধু তাদের জন্য । উন্নতমানের ফিচার নিয়ে মডেলটি এখন আমাদের মাঝে । মার্চ, 2021 দেশের মার্কেটে মডেলটিকে রিলিজ করা হয় । মোবাইলটির সুবিধা এবং অসুবিধা রিভিউতে তুলে ধরা হলো ।
এলসিডি এবং প্রসেসর
মোবাইল ফোনটিতে 6.1 ইঞ্চি সাইজের এলসিডি বিদ্যমান । মডেলটির ডিসপ্লে টাইপ আইপিএস এলসিডি । এলসিডিতে 19.5.9 রেট এর রেটিও পয়েন্ট রয়েছে । ডেনসিটি ঘনত্ব 282 পিপিআই । মোবাইলটির ওজন 195 গ্রাম । ফোনটির দৈর্ঘ্য 158.3 মিমি,প্রস্থ 75.2 মিমি এবং পুরুত্ব রয়েছে 9.8 মিমি । অপারেটিং সিস্টেমে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন 10 এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । হ্যান্ডসেটটিতে সিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে Quad-Core 1.8 GHz cortex-A53 এবং জিপিইউ রয়েছে PowerVR GE8320 । Mediatek MT6761D Helio A20 মডেলের চিপসেট রয়েছে । মোবাইলটিকে মার্কেটে পাওয়া যাবে সবুজ , নীল এবং কালো কালারে । মোবাইলটিতে আইপি প্রটেকশন দেওয়া হয়নি । এলসিডি প্যানেলটিতে এইচডি রেজুলেশন ব্যবহার করা হলেও ফুল এইচডি সাপোর্ট করবে না । বডিতে ব্যবহার করা হয়নি কোনো প্রটেকশন যার কারণে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে ।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় 8 মেগাপিক্সেলের 2 টি ক্যামেরা রয়েছে । যা দিয়ে সিনারি সহ হরেক রকমের ইমেজ তোলা যাবে । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরা 5 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা রয়েছে । মোবাইলটি দিয়ে 1080 পিক্সেলে এইচডি ভিডিও রেকোডিং করা যাবে । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে ডাবল ফ্লাশলাইট রাখা হয়েছে । হ্যান্ডসেটটিতে হাই কোয়ালিটির ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়নি যার কারণে ছবি আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি । স্বল্পমূল্যের ভিতরে আপনি যদি ভাল মানের ক্যামেরা আশা করে থাকেন তাহলে কিন্তু সেটার গ্রহণযোগ্যতা নেই । স্মার্টফোনগুলোতে বাজেট বিবেচনা করে এখানে সকল পারফরম্যান্স দেওয়া হয়ে থাকে । এই মোবাইলটিতে কিন্তু ক্যামেরা পারফরম্যান্স ততটা ভালো পাওয়া যাবে না । ক্যামেরা গুলো দিয়ে আপনি চাইলে ছবি তুলতে পারবেন কিন্তু বিভিন্ন ধরনের হাই কোয়ালিটির ফিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থাকছে না ।
স্টোরেজ এবং সিকিউরিটি
স্মার্টফোনটির মেমোরিতে 2 জিবি রেমের সাথে রয়েছে 32 জিবি রোম । এসডি মেমোরিতেমাইক্রোএসডিএক্সছি স্লট ব্যবহার করা হয়েছে । ওটিজি ক্যাবল দিয়ে 256 জিবি পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে । মডেলটিতে 2 জিবি রেম ব্যবহার করা হয়েছে যা দিয়ে মোবাইলটিকে মিডিয়াম স্পিডে চালানো যাবে । অন্যের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মোবাইলটির রেয়ার মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । এর পাশাপাশিও ব্যবহার করা যাবে কম্পাস এবং প্রক্সিমিটি । যা সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সফল । মেমোরি পারফরম্যান্স বিবেচনায় এখানে আপনি চাইলেই প্রয়োজনীয় অডিও ফাইল এবং ভিডিও ফাইল কিংবা অন্যান্য ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে রাখতে পারবেন না । মেমোরি পারফরম্যান্স মোটামুটি অনেকটাই ভাল রয়েছে । স্বল্পমূল্যের থাকা সত্ত্বেও এই স্মার্টফোনটিতে কিন্তু আমরা পেয়ে যাব মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম ।
ব্যাটারি পারফরম্যান্স
লিথিয়াম পলিমার নন রিমুভেল টাইপের সাথে ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে থাকছে 5000mAh মিডিয়াম কোয়ালিটির পাওয়ার । ফাস্ট চার্জিং ব্যবস্থার সাথে রাখা হয়নি তারবিহীন চার্জিং সিস্টেম । 100% চার্জে মোবাইলটিকে সম্পূর্ণ একদিন ব্যবহার করা যাবে । ইনফিনিক্স কম্পানির প্রায় প্রতিটা মোবাইলে আমরা ব্যাটারি পারফরম্যান্স ভালো লক্ষ করতে পারি । তার ব্যতিক্রম ঘটনাও কিন্তু এখানে থাকছে না । এই মডেলটিতে ও আমরা ভালো মানের ব্যাটারি পারফরম্যান্স পেয়ে যাব । সবথেকে বেশি ভালো হত যদি ব্যাটারি সিস্টেমে তারবিহীন চার্জিং ব্যবস্থার পদক্ষেপ রাখা হতো । তার পাশাপাশি কিন্তু এখানে পাওয়া যাবেনা রিভার্স চার্জিং সিস্টেম । তবে সব মিলিয়ে মেমোরি পারফরম্যান্স কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ভালো লেগেছে আশা করি আপনাদের কাছেও ভাল লাগার কথা । টুকটাক ব্যবহারে মোবাইলটিকে সম্পূর্ণ একদিন ব্যবহার করা গেলেও গেমিং পারফরমেন্সে কিন্তু মোবাইল দিয়ে সম্পন্ন একদিন ব্যবহার করা যাবে না ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন
উন্নত মানের নেটওয়ার্ক 4G ব্যবহার করা যাবে মোবাইল ফোনটি দিয়ে । মডেলটি ডুয়েল সিম সাপোর্টেড । থ্রিজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বনিম্ন 5.76 এমবিবিএস এবং সর্বোচ্চ 42.2 এমবিবিএস স্পিড উপভোগ করা যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 150 এমবিপিএস পর্যন্ত নেটওয়ার্ক কানেকশন উপভোগ করা যাবে । ব্লুটুথ, জিপিএস, রেডিও, ওয়াইফাই, হটস্পট এর মতো ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক নিশ্চিন্তে চালানো যাবে । স্মার্টফোনটি দিয়ে দেশের যে কোন জায়গায় উন্নত মানের ফাস্টেস্ট নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক এর কিছু ভার্সন রয়েছে যেগুলো হলো 1,3,5,8,38,40,41। তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো ফুলস্পিডে ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে । তবে এর মধ্য থেকে ব্যবহার করা যাবে না এনএফসি এবং ইনফারেট পোর্ট । সবমিলিয়ে নেটওয়ার্ক কানেকশন খুবই ভালো । নেটওয়ার্ক কানেকশনের দিক দিয়ে মোবাইলটির পরিচিতি অনেকদূর এগিয়ে ।
গেমিং পারফরম্যান্স
এই মোবাইলটি গেম খেলার জন্য প্রযোজ্য নয় । কেননা এই মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়নি ।
তাছাড়া 2GB রেম দিয়ে অনলাইন গেমগুলো ফাস্টেস্ট স্পিডে খেলা সম্ভব নয় । গ্রাফিক্স বিহীন অনলাইন গেম গুলো খেলা যাবে তবে এই মডেলটি হ্যাং করার সম্ভাবনা অনেক বেশি । বর্তমান মার্কেট দেশগুলোর মধ্যে গেমিং এর বাজার কিন্তু অনেক বড় । অনলাইন গেমগুলোর ব্যাপক চাহিদা পৃথিবীর সারা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে । আসছে অনলাইন গেম গুলো খেলার জন্য আমরা অনেকেই তাদের করে থাকি একটি স্মার্টফোন অথবা হ্যান্ডসেট । যেহেতু অনলাইন গেম গুলো জনপ্রিয়তা অনেক বেশি সেহেতো সেই গেম গুলো খেলার জন্য একটি মানসম্মত ডিভাইসের প্রয়োজন হয়ে থাকবে । তুমি আপনারা এই স্মার্টফোনটি দিও কিন্তু গেম খেলতে পারবেন তবে এখানে উন্নত মানের অথবা হাই কোয়ালিটির গ্রাফিক্স ডিজাইন সাপোর্ট করবে না । তাছাড়াও গেমগুলো খেলার জন্য ভালো মানের মুভমেন্ট এটা দিয়ে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে । আমার পক্ষ থেকে একটি সাজেস্ট থাকবে যারা প্রফেশনালভাবে অনলাইন গেম গুলো খেলতে চাইবে তাদের একটি ভালো ডিভাইসের প্রয়োজন অবশ্যই । আর ভালো পারফরর্মেন্স দেওয়ার জন্য এই ডিভাইসটি যোগ্য নয় ।
বাংলাদেশি মূল্য
মোবাইলটিকে অফিশিয়াল ভাবে বাংলাদেশের যে কোন মার্কেটে এবং ইনফিনিক্স শোরুমে পাওয়া যাবে । কম খরচের এই মডেলটি খুব সহজেই পাবেন হাতের মুঠোয়। মডেলটির অফিসিয়াল মূল্য বাংলাদেশে মাত্র ৳6,990 টাকা ৷ দেশের মার্কেটে এই মডেলটিকে অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল দুই ভাবেই পাওয়া যাবে । এখন আপনি কোন মডেলটি কিনতে চাচ্ছেন সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর । অফিশিয়ল স্মার্টফোনটি কিছুটা বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হতে পারে । বেশি টাকা দিয়ে কিনলে ও আপনার এই মডেলটি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত । কিন্তু আনঅফিসিয়ালি স্মার্টফোনটি যেকোনো সময় সরকার চাইলে বন্ধ করে দিতে পারে । এই জন্য আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই একটি সাজেস্ট থাকবে যে অফিশিয়াল স্মার্টফোনটি ক্রয় করা সবার ক্ষেত্রেই উচিত । আনঅফিসিয়ালি স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেকটা রিস্ক রয়েছে ।
অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে কিনা ?
বর্তমানে মানুষ বিশেষ করে মোবাইল ফোন করার করার ক্ষেত্রে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্ডার করে করে থাকে । আমাদের মধ্যে আবার অনেকেই রয়েছে যারা কিনা অনলাইন থেকে ক্রয় করাটা অনেকটা ঝুঁকি বলে মনে করে । তবে ভুলভাল ওয়েবসাইট থেকে ক্রয় করার ক্ষেত্রে ঝামেলা হওয়ারই কথা । কিন্তু আপনি যদি অফিশিয়াল পেজ গুলো থেকে যেকোনো পণ্য অর্ডার করেন তাহলে কিন্তু সেগুলো আপনার হাতে পৌঁছে যাবে । এই মোবাইলটি অনলাইন থেকে অর্ডার করার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখা উচিত । ইনফিনিক্স এর অফিশিয়াল পেইজ বাংলাদেশের রয়েছে আপনি চাইলে সেখানে গিয়ে এই মোবাইলটিকে অর্ডার করতে পারবেন খুব সহজেই । তবে সবার প্রথমে যে বিষয়টির উপর লক্ষ্য রাখবেন সেটি হচ্ছে আপনি যেই ওয়েবসাইট থেকেই স্মার্টফোনটি কিনছেন সেটি যেন অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে থাকে তা না হলে আপনার ঠকে যাওয়া সম্ভবনা কিন্তু অনেক বেশি ।
এই দামে মোবাইলটির পারফরম্যান্স কেমন ?
স্মার্টফোনটি স্বল্পমূল্যের ভিতরে রয়েছে যার কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেরই এটা মনে হতে পারে যে স্বল্পমূল্যের ভিতরে থাকা মোবাইলের ভিতর হয়তো ততটা হাই কোয়ালিটির পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে না । এই ধারণাটি আসলে সঠিক নয় । দাম অনুযায়ী মোবাইলটিতে খুবই ভালো মানের পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে । পারফরমেন্সের দিক দিয়ে এই মোবাইলটি মার্কেটপ্লেসে অন্যান্য মডেলগুলো থেকে অনেকটা এগিয়ে । আবার অনেকের মনে হতেই পারে যে এই দাম দিয়ে ফোনটি কিনে ভালো স্পিড পাওয়া যাবে কিনা ? কম দামের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও এই মোবাইলটিতে কিন্তু আমরা হাই কোয়ালিটির পারফরম্যান্স ফিচার পেয়ে যাব । ইতিমধ্যেই ব্যবহারকারীরা মোবাইলটির পারফরম্যান্স সম্পর্কে পঞ্চমুখ । ফিচার এবং পারফরমেন্সের দিক দিয়ে এই মোবাইলটি পিছিয়ে নেই স্বল্পমূল্যের ভিতরে এই মোবাইলটি ক্রয় করে আপনিও একটি ভালো মানের হ্যান্ডসেট হাতে নিতে পারবেন ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন