স্বল্পমূল্যের ভিতরে মিডিয়াম কোয়ালিটির মোবাইলফোন মার্কেটে রিলিজ করে থাকে নোকিয়া ব্রান্ড । মানে ভালো এবং দামে কম হওয়ায় মোবাইল গুলো মার্কেটে প্রায় অনেকটাই জনপ্রিয় । নোকিয়া কোম্পানিটি অনেক পুরনো একটি ব্র্যান্ড । মোটামুটি কম দামের ভিতরে থাকা মডেল গুলোকে মার্কেটে রিলিজ করার কারণে সাধারণ জনগণ খুব সহজেই তাদের রিলিজকৃত স্মার্টফোনগুলোকে হাতের কাছে পেয়ে যায় । নোকিয়া কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক আগে থেকেই । নোকিয়ার হাত ধরে মার্কেটে চলে আসলো Nokia C20 প্লাস । নির্ধারিত বাজার সিগমেন্টে স্মার্টফোনটির পারফরম্যান্স দারুন । ইতিমধ্যেই ব্র্যান্ডটি এই ডিভাইসটিকে আমাদের মাঝে রিলিজ করে দিয়েছে ।মডেলটির পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা কতটা আশাবাদী ? স্বল্প মূল্যের এই মডেলটি দিয়ে কি ফাস্টস্ট স্পিড নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে ? বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক তাহলে ।
ডিসপ্লে
ফোনটিতে আইপিএস প্যানেলের 6.5 ইঞ্চি ডিসপ্লে সাইজ রয়েছে । এটা বলা যায় যে মোটামুটি বড় আকৃতির এলসিডি ব্যবহার করা হয়েছে । স্মার্টফোনটির ডিসপ্লেতে রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়নি । 720×1600 পিক্সেল রেজুলেশনের সাথে 20:9 রেটিও রেট রয়েছে ।
মোবাইলটির এলসিডি ঘনত্ব 270 পিপিআই ডেনসিটি । টাচস্ক্রিনে মাল্টিটাচ এর উপস্থিতি দেখা যায় । ডিসপ্লে সাইজ খুব পছন্দ হয়েছে বিশেষ করে যারা ভিডিও প্লেব্যাক দেখতে পছন্দ করি তাদের জন্য পারফেক্ট । তবে ডিসপ্লে রেজুলেশন খুব একটা হাই কোয়ালিটির নয় । অনেকটা শার্পনেস এর অভাব পাওয়া যাবে । স্বল্প আলোতে ব্রাইটনেস ঠিকঠাক থাকবে তবে একটু রোদ্রে তুলনামূলক কম পাওয়া যাবে । ডিভাইসটির ডিসপ্লেতে 16 মিলি কালার সাপোর্ট করবে । যে বিষয়টি সকলের কাছে ভালো লাগার কথা । ডিসপ্লের ঘনত্ব আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো তবে বাজেটের উপরও তাকাতে হবে ।
অপারেটিং সিস্টেম ও প্রসেসর
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন 11 দ্বারা এই মোবাইলটির অপারেটিং সিস্টেম পরিচালিত । লাইট ভার্সন এর সফটওয়্যার গুলোকে এই মোবাইলটি দিয়ে খুব ভালোভাবে চালানো যাবে । মোবাইলটির চিপসেটে Unisoc SC9863A মডেল এর উপস্থিতির পাশাপাশি প্রসেসরে Octa-Core (4×1.6 GHz cortex-A55 & 4×1.2 GHz cortex-A55 ) মডেল ব্যবহার করা হয়েছে । এর সাথে সাথে Mali - G52 MC2 মডেলের জিপিইউ রয়েছে । অপারেটিং সিস্টেমের যে বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে সেটি হচ্ছে ডিভাইসটি স্বল্পমূল্যের সিগমেন্টের মধ্যে থাকার পরেও এখানে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে । গেমিং পারফরমেন্সের জন্য জিপিইউতে অনেক পুরনো ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে এখানে আরেকটু উন্নত ভার্সন ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল । প্রসেসরে অক্টাকোর ব্যবহার করা হয়েছে যেটা মেনে নেওয়া যায় । অপারেটিং সিস্টেমের এগুলো বাদে বাকি সবগুলো বিষয় খুবই ভালো লেগেছে ।
বডি ডিজাইন
165.4 মিলিমিটার দৈর্ঘ্য , 75.9 মিলিমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এই মোবাইলটির বডি ডিজাইন অনেকটা নজরকাড়া । 204 গ্রামের এই মোবাইলটিকে কালো এবং নিল কালারে মার্কেটে পাওয়া যাবে । মোবাইলটির ওজন তুলনামূলক ভারী হলেও হাতে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য ভাবেই ব্যবহার করা যাবে । মোবাইলটির ডানপাশে লক্ষ্য করা যায় পাওয়ার বাটনের অবস্থান এবং বাম পাশে রয়েছে সিম এবং মেমোরি কার্ড স্লট । বডি ডিজাইন মোটামুটি সকলের কাছেই ভালো লাগার কথা । বিল্ড কোয়ালিটিতে রয়েছে হাই কোয়ালিটি মানের ফিনিশিং । স্মার্টফোনটির ডানপাশে থাকছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বাটন ও বাম পাশে পাওয়া যাবে মেমোরি এবং সিম কার্ড স্লট । বডিটি কিন্তু খুবই শক্তিশালী তবে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে । বডির সুরক্ষার জন্য গরিলা গ্লাসের কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । বিল্ড ম্যাটারিয়াল এ পাওয়া যাবে গ্লাস ফ্রন্ট এবং প্লাস্টিক ব্যাক ।
স্টোরেজ
স্মার্টফোনের মেমোরি কার্ডে 3 জিবি রেম এর পাশাপাশি 32 জিবি রোম ব্যবহার করা হয়েছে । মাইক্রোএসডি এক্সসি টাইপের মেমোরি কার্ড স্লট রয়েছে । ওটিজি ক্যাবল ব্যবহার করে 256 জিবি পর্যন্ত রোম ব্যবহার করা যাবে । বাজেটের উপর নজর রেখে মোবাইলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্টোরেজ । মোটামুটি মিডিয়াম কোয়ালিটির স্টোরেজ ব্যবহার করার কারণে ফোনটিকে ফাস্টেস্ট স্পিডে চালানো যাবে । প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে রাখা যাবে তবে বেশি পরিমাণে রাখা যাবে না । মেমোরি স্টোরেজ ততটা বেশি না হওয়ার কারণে হাই কোয়ালিটির সফটওয়্যারগুলোকে রান করাতে অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে । সফটওয়্যারগুলোতে কিছুটা হ্যাং অথবা ল্যাকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে । এই বাজেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য মডেল গুলোতেও এর থেকে বেশি পারফরম্যান্স দেখা যায় না । বাজেটের হিসাব করতে গেলে মেমোরি পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো ।
ক্যামেরা
মোবাইলটির প্রাইমারি সেটআপে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ ব্যবহার করা হয়েছে । 8+2 মেগাপিক্সেলের দুইটি রেয়ার ক্যামেরা লক্ষ্য করা যায় । অটোফোকাস দিয়ে ইমেজ তোলা যাবে । ব্যাক ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট অনেকটা আলো দিতে সক্ষমতা প্রদান করবে । 1280×720 রেজুলেশনে যেকোন ভিডিও 720 পিক্সেলে দেখা যাবে । ছবি তোলার জন্য ফ্রন্ট ক্যামেরায় রয়েছে 5 মেগাপিক্সেলের একটি রেয়ার ক্যামেরা । এইচডিআর মোডে ইমেজ এবং সেলফি তোলা যাবে । আন্ডার ডিসপ্লেতে ক্যামেরা গুলোকে গোলাকৃতি আকারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে । স্বল্প আলোর পাশাপাশি নাইট মোডে ভালো মানের ইমেজ ক্যাপচার করা যাবে না । প্রাইমারি ক্যামেরাগুলো আরেকটু উন্নত হলে মাস্ট বি ভালো পারফর্ম করার সম্ভাবনা থাকতো । ফ্রন্ট ক্যামেরা 10 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরার প্রয়োজন ছিল । প্রাইমারি ক্যামেরার depth সেন্সরে 2 মেগাপিক্সেলের এর পরিবর্তে 5 মেগাপিক্সেলের থাকলে বিভিন্ন মোডের সাথে ইমেজ তোলা যেতো ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন
মোবাইলটি দিয়ে টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি নেটওয়ার্কের মত দ্রুতগতিসম্পন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে । দেশের সমস্ত জায়গা জুড়ে ফোরজি নেটওয়ার্ক সংযোগে রাখা যাবে মোবাইলটিকে । থ্রিজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 2100 এমবিপিএস গতি এবং ফোরজি নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ 42.2 এমবিপিএস গতি অনায়াসেই ব্যবহার করা যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক এর ভার্সনগুলো হল 1,3,5,8,38,40,41 । ফোনটিতে ব্যবহার করা যাবে nano-sim এর পাশাপাশি ডুয়েল সিম কার্ড । ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক গুলোর সবিধা তো রয়েছেই । স্মার্টফোনটি দিয়ে সর্বোচ্চ ফোরজি নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । দেশের সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ফোরজি নেটওয়ার্ক কানেকশন সংযোগ রেখে ফাস্টেস্ট স্পিড ব্যবহার করা যাবে । মাইক্রো ইউএসবি 2.0 মডেল এর সাথে পাওয়া যাবে ওটিজি ক্যাবল ব্যবহারের সুবিধা । 5.0 মডেলের ব্লুটুথ ব্যবহার করা গেলেও পাওয়া যাবেনা এনএফসি ।
ব্যাটারি
non-removable ব্যাটারি টাইপের ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 4950 মিডিয়াম কোয়ালিটি পাওয়ার । ব্যাটারিটিতে ওয়ারলেস চার্জিং সিস্টেম ব্যবস্থা রাখা হয়নি । মোবাইলের সাথে চার্জার দেওয়া হবে যা দিয়ে 10 ওয়াট দ্রুতগতিতে ব্যাটারীতে চার্জ হবে । দশ ওয়াট চার্জে মোবাইলটি ফুল চার্জ হতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যাবে । এই বাজেটের মধ্যে মোবাইলের ব্যাটারি পারফরমেন্সে অনেকটাই চোখে পড়ার মতো । ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম এবং রিভার্স চার্জিং ডেলিভারির কোন ব্যবস্থা পাওয়া যাবে না । দশ ওয়াট চার্জিং ডেলিভারি অনেকটাই স্লো এখানে 15 ওয়াট দিলে অনেকটা ভালো হতো । ব্যাটারি ক্যাপাসিটিতে ব্যবহার করা পাওয়ার তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো । এর থেকে হাই কোয়ালিটির ডিভাইসগুলোতেও এমন ব্যাটারি পারফরম্যান্স দেওয়া হয় না । ব্যাটারি পারফরম্যান্সের জন্য রয়েছে আলাদা জনপ্রিয়তা ।
সিকিউরিটি
প্রায় প্রতিটা মোবাইলফোনেই সিকিউরিটি অপশন রাখা হয়েছে । মোবাইলের সুরক্ষার জন্য ঠিক এই মডেলটিতে ও ব্যবহার করা যাবে সিকিউরিটি পদক্ষেপ । অ্যাক্সেলেরোমিটার , প্রক্সিমিটি এবং কম্পাস এর মত জনপ্রিয় অপশন রাখা হয়েছে সিকিউরিটি পদক্ষেপে । বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি সিকিউরিটি সিস্টেম হল মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । যা এই মোবাইলটিতে দেখা যাবে না । মোবাইলটিতে সবকিছু আপডেট করা হলেও সিকিউরিটি সিস্টেমে কোন আপডেট আনা
হয়নি । সিকিউরিটি সিস্টেম একটু আপডেট করলে ডিভাইসটি প্রিমিয়াম লুক দিতে সক্ষম হতো । তবে এগুলো ছাড়া যে সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ভালো বলে মনে হয়েছে । সঠিকভাবে শনাক্তকরণে ভালো পদক্ষেপ দিবে বলে আশা করা যায় । আরেকটু বেশি বাজেট থাকলে হয়তো হাই কোয়ালিটির সিকিউরিটি পদক্ষেপগুলো দেওয়া হতো ।
অনলাইন গেম গুলো কেমন পারফরম্যান্স দিবে ?
মোবাইলটি দিয়ে গেম খেলার জন্য আলাদাভাবে কোন প্রসেসর রাখা হয়নি যার কারণে এটা বলা যায় যে এই ফোনটি আসলে গেম খেলার জন্য নয় । ফ্রী ফায়ার , পাবজি এবং অন্যান্য অনলাইন গেম গুলো এই মোবাইলটি দিয়ে ভালো মানের গ্রাফিক্সের সাথে এবং ফাস্টেস্ট স্পিডে খেলা যাবে না বললেই চলে । গেমপ্লে ঘটার জন্য আমরা প্রায় অনেকেই স্মার্টফোন টার্গেট করে থাকি । এর মধ্যে আবার অনেকেই স্মার্টফোন দিয়ে গেম প্লে করে ফেলি । তবে এই মোবাইলটিকে গেম খেলার জন্য টার্গেট করাটা বোকামি হয়ে যাবে । যারা প্রফেশনালভাবে গেম প্লে করে থাকে এই মডেলটি আসলে তাদের জন্য নয় । আলাদাভাবে ব্যবহার করা হয়নি গেমিং গ্রাফিক্স প্রসেসর , মেমোরি পারফরম্যান্স যা গেম খেলার জন্য প্রস্তুত নয় । এককথায় আমরা বলতে পারি গেম খেলার জন্য এই মোবাইলটির সক্ষম নয় । তবে অফলাইন মোডের টুকটাক গেম গুলো একটু ভালোভাবে খেলা যাবে ।
রিলিজের সময় এবং প্রাইস
মোবাইলটিকে প্রথমবারের মতো 16 জুন 2021 তারিখে রিলিজ করা হয় । রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী মোবাইলটির বর্তমান মার্কেটমূল্য ৳10,000 টাকা । মোবাইলটিকে স্বল্প বাজেটের মধ্যে রাখায় সব শ্রেণীর মানুষ খুব সহজেই তাদের বাজেটের মধ্যে রাখতে পারবে বলে আমি আশাবাদী । অফিশিয়াল ছাড়াও আনঅফিসিয়াল ভাবে এই মোবাইলটিকে ক্রয় করা যাবে । তবে যে কেউ চাইলে ফোনটিকে অনলাইন থেকে অর্ডার করতে পারবে । অনলাইন ওয়েবসাইটে নোকিয়ার অফিশিয়াল পেইজ রয়েছে যেখান থেকে আমরা স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ দিয়ে মডেলটি অর্ডার করতে পারব ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন