পথযাত্রায় প্রথম থেকেই নোকিয়া আমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে যাচ্ছে । হাই কোয়ালিটির প্রাইস থেকে শুরু করে কোম্পানিটি মার্কেটে রিলিজ করে থাকে লো কোয়ালিটির মধ্যে ভালো মানের স্মার্টফোন । তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে নোকায়া ব্রান্ডের উপর বিশেষ চাহিদা দেখা যায় । কোম্পানিটি তাদের কাস্টমারদের কথা মাথায় রেখে মার্কেটে রিলিজ করছে একের পর এক মডেল । সেই শুরু থেকেই তাদের জনপ্রিয়তা ব্যাপক । নিত্য নতুন আকর্ষণীয় মডেল উদ্ভাবন করে মিটিয়ে যাচ্ছে তাদের কাস্টমারদের চাহিদা । তাদের তৈরি মডেলগুলো জনসাধারণ খুব সহজেই আয়ত্ত্ব করতে পারে । 27 জুলাই,2021 কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে মার্কেটে লঞ্চ করেছে Nokia XR20 মডেল । স্মার্টফোনটিতে কি কি থাকছে ? কেন আমাদের ফোনটি কেনা উচিত ? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । এই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে আমাদের কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা মুখোমুখি হতে হবে ।
স্মার্টফোনটিতে পাঞ্চ হোল বেজেল লেস টাইপ এলসিডির সাথে রয়েছে বড় আকৃতির ডিসপ্লে । যার সাইজ 6.67 ইঞ্চি । এই মডেলটিতে আইপিএস এলসিডি ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রীন রয়েছে যাতে সাপোর্ট করবে 16M কালার । 1080×2400 পিক্সেলের রেজুলেশন রয়েছে মোবাইলটি ডিসপ্লেতে । পিক্সেল ডেন্সিটি রয়েছে 395 পিপিআই এবং 20.9 রেটের অ্যাসপেক্ট রেটিও রয়েছে ।
এছাড়াও ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়েছে মাল্টিটাচ । স্ক্রিন এবং বডি রেটিও রেট 76.8% । অনেক সময় আমাদের ব্যবহার করা মোবাইলটি হাত থেকে পিছলে পড়ে গিয়ে ডিসপ্লেটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আর সেই জন্য ডিসপ্লের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ভিকটাস 6 । এই সুরক্ষাটি ব্যবহার করার ফলে আমাদের হাতে থাকা মোবাইলটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে । এই মোবাইলটির ব্রাইটনেসে রয়েছে -550 নিটস ।
মোবাইলটিকে এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 এর আওতাভুক্ত রাখা হয়েছে । যা প্রসেসর টাইপ Octa-Core (2×2.0 GHz kryo 460 & 6×1.8 GHz kryo 460),চিপসেটের ধরন Qualcomm SM4350 Snapdragon 480 5G এবং জিপিইউ রয়েছে Adreno 619 । হ্যান্ডসেটটির দৈর্ঘ্য 6.76 ইঞ্চি, প্রস্থ 3.21 ইঞ্চি এবং পুরুত্ব 0.42 ইঞ্চি । এই মোবাইলটিকে মার্কেটপ্লেসগুলোতে নীল এবং ধূসর কালারে পাওয়া যাবে । 248 গ্রামের এই মোবাইল ফোনটি পকেটে অথবা হাতে নিয়ে চলাচল করতে সুবিধা হবে । এই স্মার্টফোনটি কিন্তু সম্পূর্ণ ধুলোবালি এবং পানিরোধক । নোকিয়া কোম্পানির মডেল গুলোতেও ওয়াটারপ্রুফ সিস্টেম রাখা হয়েছে এ বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে । স্মার্টফোনটির তুলনামূলক ওজনে একটু বেশি । তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ততটা অসুবিধা হওয়ার প্রশ্ন আসে না
মডেলটিতে 4জি ফাস্টেস্ট নেটওয়ার্ক এর সাথে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক এর অপশন রাখা হয়েছে । দেশের যে কোন জায়গা থেকেই ফুল স্পিড নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । মডেলটিতে কিছু 4জি ভার্সন রয়েছে আর সেগুলো হলো, 1,2,3,4,5,7,8,12,13,14,20,25,26,28,30,38,40,41,48,66,71 । ফোরজি স্পিডে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 42.2 এমবিবিএস নেটওয়ার্ক উপভোগ করা যাবে । ফোরজি ভার্সনের সাথে রয়েছে কিছু ফাইভ-জি ভার্সন যেমন, 2,5,25,38,41,48,66,77,78 । ন্যানো সিম এর সাথে ব্যবহার করা যাবে ডুয়েল সিম । এইচটিএমএল 5 ব্রাউজিং সিস্টেম রয়েছে । অনায়াসেই ফুল স্পিডে চালানো যাবে তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো । অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে এই স্মার্টফোনটি দিয়ে ফুল স্পীডে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা যাবে না । এ বিষয়টি আসলে ভুল । স্মার্টফোনটি দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করা যাবে ফুল স্পিডে ।
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় 48 মেগাপিক্সেল এবং 13 মেগাপিক্সেলের এর দুইটি আকর্ষণীয় ক্যামেরা রয়েছে । ওয়াইড ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে 48 মেগাপিক্সেল এবং আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে 13 মেগাপিক্সেল । যা দিয়ে স্পষ্ট ভাবে 6000×8000 পিক্সেলে ইমেজ তোলা যাবে । ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট এর সাথে ডায়নামিক রেঞ্জ মুড, ডিজিটাল জুম, অটো ফ্লাশ, ফেস ডিটেকশন ফিচারে সজ্জিত এই মডেলটি । সেলফি তোলার জন্য সামনের ক্যামেরায় রয়েছে 8 মেগাপিক্সেল এর একটি ক্যামেরা । মোবাইলটি দিয়ে 1080 পিক্সেলে যেকোন ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে । ক্যামেরা গুলোর সাথে খুব ভালো মানের ছবি ক্যাপচার করা যাবে প্রাইমারি এবং সামনের ক্যামেরার মাধ্যমে । প্রাইমারি ক্যামেরাগুলো দিয়ে খুব ভালো মানের রেজুলেশনের সাথে ছবি এবং ভিডিও করা যাবে যেটা আমাদের সকলের পছন্দ হবে ইনশাল্লাহ ।
এই স্মার্টফোনটিতে নন রিমুভেবল ব্যাটারি টাইপ ব্যবহার করা হয়েছে । যার ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 4630mAh পাওয়ার । ব্যাটারিটি 18W গতিতে 2 ঘন্টা সময় নিবে সম্পূর্ণ চার্জ হতে । এই মোবাইলটিতে রাখা হয়েছে ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেমে 15W গতিতে চার্জ হবে । এছাড়াও মোবাইলটিতে সিকিউরিটি পদক্ষেপ রাখা হয়েছে । মোবাইলটির সাইড মাউন্টেডে সেট করা হয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । প্রক্সিমিটি, একসিলোমিটার এবং কম্পাস এর মত আরো নানা ধরনের সিকিউরিটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো কিন্তু অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করতে সফল হয়ে থাকবে । অন্যদিকে এর সাইট মাউন্টেডে কিন্তু আমরা পেয়ে যাব বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি অনেকটাই দ্রুত কাজ করে থাকবে । ব্যাটারি এবং সিকিউরিটি সিস্টেম এক কথায় দারুন । একটু মিডিয়াম কোয়ালিটির ভিতরে থাকায় ব্যাটারি এবং সিকিউরিটি পারফরম্যান্স সকলের পছন্দ হবে
ইনশাল্লাহ ।
আমরা যারা নতুন মোবাইল কিনতে চাচ্ছি তাদেরকে স্টোরেজের উপর অবশ্যই নজর রাখা উচিত । কেননা কম স্টোরেজের মোবাইল ফোনগুলো ততটা ভালো সার্ভিস দিবে না । Nokia XR20 মোবাইলটির মেমোরিতে 6 জিবি রেমের সাথে রয়েছে 128 জিবি রোম। এই স্মার্টফোনটিতে বেশি স্টোরেজ ব্যবহার করার কারণে ভালো পারফরম্যান্স দিবে বলে আশা করা যায় । নোকিয়া কোম্পানির অন্যান্য মডেলগুলোতে আমরা মেমোরি পারফরম্যান্স খুব ততটা ভালো দেখতে পাইনা কিন্তু এই স্মার্টফোনটিতে মেমোরি এবং স্টোরেজ পারফরম্যান্স খুবই ভালো ব্যবহার করা হয়েছে । মেমোরি পারফর্মেন্স ভালো থাকার কারণে ফোনটিকে ফাস্টেস্ট স্পিডে ব্যবহার করা যাবে এবং প্লে স্টোর থেকে যে কোন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার রান করানো যাবে খুব সহজ এ ক্ষেত্রে কোন হেং অথবা ল্যাক করবে না ।
করোনা মহামারীতে আপনি চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে বসেই মোবাইলটিকে অনলাইন থেকে অর্ডার করতে পারবেন । তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যে ওয়েবসাইট থেকে আপনি মোবাইলটি অর্ডার করতে যাচ্ছেন সে ওয়েবসাইটটি কতটা শর্তসাপেক্ষে কাজ করে । ই-কমার্স সাইটের উন্নতির ফলে আমরা কিন্তু ঘরে বসে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্ডার করতে পারি । আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করে । বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ই-কমার্সের চাহিদা এখন প্রচুর । আমরা যারা অনলাইন থেকে এই মডেলটিকে অর্ডার করতে চাচ্ছি তাদের জন্য নোকিয়ার অফিশিয়াল পেইজ রয়েছে যেখান থেকে আপনি চাইলে নকিয়ার এই মডেলদের ছাড়াও অন্যান্য মডেল গুলো পেয়ে যাবেন । এই মডেলটিকে অনলাইন থেকে ক্রয় করতে চাইলে আপনাকে হয়তো কিছু টাকা বেশি খরচ করতে হবে ।
মোবাইলটিকে বাংলাদেশের নোকিয়া শোরুম ছাড়াও মার্কেটপ্লেসগুলোতে রিলিজ করা হয়েছে । আকর্ষণীয় স্মার্টফোনটি আপনি পাচ্ছেন মাত্র ৳48,000 টাকায় । স্মার্টফোনটিকে মার্কেটগুলোতে অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল দুই ভাবেই পাওয়া যাবে । আমরা অনেকেই ভাবতে পারিনি যে নোকিয়া স্মার্টফোন গুলোতে স্বল্পমূল্যের প্রাইস নির্ধারণ করা হয়ে থাকে কিন্তু এই ফোনটিতে মিডিয়াম প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে
কেন । প্রায় প্রতিটা কোম্পানি হাই কোয়ালিটির পাশাপাশি কিছু লো কোয়ালিটির স্মার্টফোন মার্কেটে রিলিজ করে থাকে । তবে তাদের মধ্যে নোকিয়া কোম্পানিটি অন্যতম । হাই কোয়ালিটির পাশাপাশি লো কোয়ালিটির ভিতরে অনেক মডেল রয়েছে যেগুলো সাধারণ মানুষ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে । দামের পাশাপাশি পারফরম্যান্স খুবই ভালো এই মোবাইলটির ।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে এই স্মার্টফোনটি মিডিয়াম কোয়ালিটি প্রাইস এর মধ্যে থাকায় সবাই হয়তো ভাবতে পারেন যে এটি দিয়ে গেম খেলা যাবে এবং গেমিং পারফরম্যান্স ভালো দিয়ে থাকবে । কিন্তু গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য প্রয়োজন হয়ে থাকে গেমিং ডিভাইস যার আওতায় এই ডিভাইসটিকে রাখা হয়নি বা নেই । তবে অফলাইন জগতের প্রায় প্রত্যেকটি গেম খেলতে পারবেন ভাল স্পীড এর সাথে । কিন্তু অনলাইন জগতের হাই কোয়ালিটির গেম গুলো যেমন পাবজি অথবা ফ্রী ফায়ার খেলার জন্য এই মোবাইলটি কতটা সক্ষম ? অনলাইন জগতের গেমগুলো খেলার জন্য প্রয়োজন হয়ে থাকে ডিভাইসগুলোতে গেমিং প্রসেসর । যেখানে এই মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর নেই বললেই চলে । তবে টুকটাক স্পিডে গেম খেলা গেলেও পাওয়া যাবেনা হাই কোয়ালিটির গ্রাফিক্স ডিজাইন ।
স্মার্ট ফোনের প্রাইস প্রত্যক্ষ করলে আমরা দেখতে পাব এই মডেলটিকে মিডিয়াম কোয়ালিটি এর আওতায় রাখা হয়েছে । এখন অনেকের ভাবনা জাগতে পারে যেহেতু এই মোবাইলটি মিডিয়াম প্রাইস এর মধ্যে রয়েছে সেহেতু এই মোবাইলটির দিয়ে মনে হয় ভাল মানের পারফরম্যান্স এবং উন্নত পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে না । এটি একটি ভুল ধারণা । পারফরমেন্সের দিক দিয়ে মডেলটি অন্যান্য মডেলগুলো থেকে কিন্তু পিছিয়ে নেই । খুব ভালো মানের বডি ডেকারেশন , ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং ডিসপ্লে কোয়ালিটি থাকার কারণে এই মডেলটি সবার কাছে পছন্দ হবে বলে আমি আশাবাদী ।
Smartphone
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন