Ads

কম বাজেটে ভালো মানের মোবাইল ফোনের অপেক্ষায় বসে আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই । তাদের অস্থিরতা দূর করার জন্যই শাওমি মার্কেটে রিলিজ করলো রেডমি নোট 10 T । এই মডেলটি রেডমি সিরিজগুলোর ভিতরে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে । একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে এই মডেলটি এমআই নোট সিরিজের মধ্যে প্রথম ফাইভ জি স্মার্টফোন । রেডমি সিরিজগুলোর মধ্যে প্রথম ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় থাকার কারণে এই ডিভাইসটির জনপ্রিয়তাও একটু বেশি । কম বাজেটের মধ্যে সমস্ত পারফরম্যান্সে ঘেরা এই মডেলটি  । জনপ্রিয়  প্রসেসর এর সাথে রয়েছে মিডিয়াম লাইফ টাইম এর ব্যাটারি পাওয়ার । কম বাজেটের এই মোবাইলটি কেমন পারফরম্যান্স দিবে ? মোবাইলটি কেনা উচিত হবে কি ? গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য হতাশা সৃষ্টি করবে নাতো ? এক নজরে জেনে যাওয়া যাক মোবাইলটি সম্পর্কে । 

Redmi Note 10 T Bangladesh Price-যারা ক্যামেরা ও ডিসপ্লে ভালো চান





ডিসপ্লে কোয়ালিটি

মোবাইলটিতে দেওয়া হয়েছে বৃহৎ আকৃতির 6.5 ইঞ্চি এলসিডি সাইজ । মোবাইলটির ডিসপ্লে গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য অনেকটাই উপযোগী বলা যায় । 90 হার্জের ডিসপ্লেটিতে খুব সহজেই সাপোর্ট করবে 16 মিলি কালার । 1080×2400 পিক্সেলের ক্লিয়ার ভিডিও রেজুলেশন রয়েছে । 20 অনুপাত 9 বডির রেডিও রেট এর সাথে ডিসপ্লের ঘনত্ব লক্ষ করা যায় 405 পিপিআই ডেনসিটি । টাচস্ক্রিনের টাচ স্পিড চোখে পড়ার মতো । ডিসপ্লে রেজুলেশন নিয়ে ডাউট এর কোন প্রশ্ন আসে না এখানে ভালো রেজুলেশন দেওয়া হয়েছে । ডিসপ্লের ঘনত্ব অনেক বেশি যার কারণে ভিডিও অথবা প্লেব্যাক ঘোলা হওয়ার কোন চান্স নেই । রিফ্রেশ রেটের পরিমাণ হাই কোয়ালিটি হওয়ার কারণে ডিসপ্লের টাচ স্ক্রিন অনেকটাই ফাস্ট কাজ করবে । সর্বোপরি ডিসপ্লে ডেকারেশন সবার কাছেই ভালো লাগার কথা । 
ডিসপ্লেটিকে উন্নতমানের ডেকোরেশন এর মাধ্যমে সাজানো হয়েছে যা এই মোবাইলটির জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট ।


অপারেটিং প্ল্যাটফর্ম


স্মার্টফোনটিকে এন্ড্রয়েড ভার্সন 11 MIUI 12 মডেল এর আওতাভুক্তে রাখা হয়েছে । মিডিয়াটেক MT6833 Dimensity 700 5G মডেলের চিপসেট ও প্রসেসরে রয়েছে জনপ্রিয় Octa-Core (2×2.2 GHz cortex-A76 & 6×2.0 GHz cortex-A55) মডেল । জিপিইউ সিস্টেমে রাখা হয়েছে মালি G57 MC2 । সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে এই স্মার্টফোনটির এর ব্যবহার করা হয়েছে গুগোল এর লেটেস্ট ভার্সন অ্যান্ড্রয়েড 11 । হ্যাঁ , পরবর্তীতে আপনি চাইলে অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট করে নিয়ে চালাতে পারবেন । চিপসেট এবং প্রসেসরের ব্যবহার দেখে আমরা খুব সহজেই এটা বলতে পারি যে এখানে যে কোন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার খুব ভালোভাবেই রান করে নেওয়া যাবে । ব্রাইটনেস এর মাত্রা মোটামুটি ভালই বলা যায় স্বল্প আলোর পাশাপাশি রোদে ব্যবহার করতে আশাকরি ততটা অসুবিধা হবে না ।


 বডি বিল্ড ডেকারেশন


মোবাইলটির বডির ডানপাশে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম বাটনের সাথে বাম পাশে রয়েছে মেমোরি এবং ডুয়েল হাইব্রিড সিম কার্ড স্লট । বডি বিল্ডের ডেকোরেশনে রাখা হয়েছে গ্লাস ফ্রন্ট, প্লাস্টিক ব্যাক এবং প্লাস্টিকের তৈরি ফ্রেম । ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্য কর্নিং গরিলা গ্লাস 3 ব্যবহার করা হয়েছে । 6.37 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, 2.96 ইঞ্চি প্রস্থের সাথে 0.35 ইঞ্চি পুরুত্ব বিশিষ্ট মোবাইলটির বডি পাশে অনেকটা চওড়া যার ওজন 190 গ্রাম । মোবাইলটিকে সাদা , কালো , সবুজ , নীল চারটি পৃথক কালারে পাওয়া যাবে । বডির সেফটির জন্য গরিলা গ্লাস এর ব্যবহার দেখা যায়নি । যার কারণে বডিটি অনেকটা হুমকির মুখে কেননা বিন্দু পরিমান আঘাতপ্রাপ্ত হলেই এটি ভেঙে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে । ডিভাইসটিতে এর পাশাপাশি রাখা হয়নি ধুলোবালি এবং পানিরোধক কোন ব্যবস্থা । যদিও মিডিয়াম কোয়ালিটির স্মার্টফোন গুলোতে এগুলোর ব্যবহার সচরাচর খুব কমই দেখা যায় ।

ক্যামেরা সেটআপ


মোবাইলটির আন্ডার ডিসপ্লেতে ত্রিপল ক্যামেরা সেটআপ দেখা যায় । প্রাইমারি ক্যামেরার ওয়াইড ক্যামেরায় 48 মেগাপিক্সেলের একটি পিডিএফ ক্যামেরা রয়েছে । ম্যাক্রো ক্যামেরায় 2 মেগাপিক্সেল এর পাশাপাশি ডেপ্ট ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়েছে 2 মেগাপিক্সেল । নাইট মুডেও ক্যামেরাগুলো দিয়ে ক্লিয়ার এবং সুস্পষ্টভাবে ইমেজ তোলা যাবে । সেলফি তোলার উদ্দেশ্যে ফ্রন্ট ক্যামেরা 8 মেগাপিক্সেল ব্যবহার করা হয়েছ । প্রাইমারি এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে 1080 পিক্সেলে যেকোনো ভিডিও ফুল এইচডি মুডে দেখা এবং রেকর্ডিং করা যাবে ‌। প্রাইমারি ক্যামেরা গুলোর সাথে পাওয়া যাবে AI ক্যামেরা , নাইট মুড , বিউটি মুড
 ইত্যাদি । 

নেটওয়ার্ক


এই স্মার্টফোনটিতে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অপশন রাখা হয়েছে যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু হয়নি তবে এটা আশা করা যায় যে খুব শীঘ্রই এদেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অপশনটি  চালু হবে । দেশের যে কোন স্থানে উন্নত মানের নেটওয়ার্ক ফোরজি ব্যবহার করা যাবে । ফোরজি নেটওয়ার্ক সংযোগে প্রতি সেকেন্ডে 42.2 এমবিপিএস নেটওয়ার্ক স্পিড খুব সহজেই উপভোগ করা যাবে । থ্রিজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 2100 mbps নেটওয়ার্ক স্পিডে চালানো যাবে । ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, হটস্পট এর মত তারবিহীন নেটওয়ার্ক ছাড়াও ইউএসবি ক্যাবল এবং ওটিজি ক্যাবল এর সুবিধা রয়েছে । ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে 2.0 মডেলের । ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে পাওয়া যাবে না এনএফসির সুবিধা । তবে কানেকটিভিটিতে থাকছে ইনফারেট পোর্ট ব্যবহার করার সুযোগ ।


স্টোরেজ


মাইক্রোএসডিএক্সসি টাইপের মেমোরিতে 4/6 জিবি রেম এর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে 64/128 জিবি রোম । ওটিজি ক্যাবলের সুবিধা ব্যবহার করে প্রয়োজনমতো রেম এবং রোম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । মোটামুটি মিডিয়াম টাইপের মেমোরি ব্যবহার করার কারণে ফোনটি অনেকটাই ফাস্টেস্ট স্পিড পারফরম্যান্স দিবে বলে ধারণা করা যায় । ডিভাইসটির মেমোরি পারফরম্যান্সে যে স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে ফাস্ট স্পিড পাওয়ার জন্য এটি পারফেক্ট । মেমোরি কার্ড স্লটে ব্যবহার করা হয়েছে UFS 2.2 ভার্সন । বাজেট পরিকল্পনায় স্মার্টফোনটিতে প্রিমিয়াম মানের মেমোরি পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে । ব্যবহারকারীরা অনেকেই ডিভাইসটি ব্যবহার করে ফাস্টেস্ট স্পিড পেয়েছে বলে জানিয়েছে । ব্যবহার করার সময় হ্যাঁং অথবা লেকের উপস্থিতি দৃষ্টিতে আসার সম্ভাবনা খুবই কম । তবে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ফাইল সফটওয়্যার এবং অ্যাপস ব্যবহার করার কারণে দীর্ঘদিন স্পীড দেওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু রয়েছে ।


ব্যাটারি


মিডিয়াম লাইফ টাইম এর ব্যাটারি লক্ষ করা যায় এই মোবাইলটিতে । lithium-polymer টাইপের ব্যাটারীটির ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 5000mah পাওয়ার । ব্যাটারীতে 18 ওয়াট দ্রুত চার্জিং সিস্টেম রাখা হয়েছে । ফুল চার্জ  টুকটাক অনলাইন ব্যবহারে একদিন চলে যাবে । চার্জার বক্সে পাওয়া যাবে 22.5 ওয়াট দ্রুত গতি সম্পূর্ণ চার্জিং সিস্টেম । তারবিহীন চার্জিং সিস্টেমের পাশাপাশি এখানে নেই রিভার্স চার্জিং সিস্টেম । এগুলো ব্যবহার করার ফলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি হাইলাইটস অনেকটাই প্রিমিয়াম হয়ে যেত । এটা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি বিধায় কোম্পানিটি এখানে এই সিস্টেমটি অফ রেখেছে । ব্যাটারি লাইফ টাইম খুবই চমৎকার । ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগলেও ডিভাইসটি কিন্তু একদিনের বেশী ফিচার দিয়ে থাকবে । ব্যাটারি পারফরম্যান্স সবার কাছেই ভাল লাগবে এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না তবে কোম্পানিটি যা দিয়েছে মোটামুটি ভালই বলা যায় ।



সিকিউরিটি

মোবাইলটির বডির ডানদিকে সেট করা হয়েছে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর । সেন্সরটি খুব দ্রুতই কাজ করে থাকে । এর পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাক্সেলেরোমিটার ,প্রক্সিমিটি ,এবং কম্পাস এর মত জনপ্রিয় সব সিকিউরিটি পদক্ষেপ । যেগুলোর কর্মদক্ষতা নির্ভুল এবং সফল হয়ে থাকে ‌‌। তবে সিকিউরিটি সিস্টেমের আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি এখানে উন্নত মানের সিকিউরিটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করার কারণে মোবাইলটি সিকিউরিটি সিস্টেমের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে । কেবলমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর নয় এর পাশাপাশি এখানে পাওয়া যাবে এআই ফেইস আনলকিং সিস্টেম । আমরা যারা ফোন কিনার পূর্বে সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো যাচাই করে নেই তাদের কাছে এই মডেলটি মার্কেটের মধ্যে সেরা । ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফেইসলক ছাড়াও অন্যান্য সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে । 


গেমিং পারফরম্যান্স


মোবাইলটিতে গেমিং প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে খুব ভালো মানের গ্রাফিক্সের সাথেই গেম প্লে করা যাবে । মোটামুটি ভালো কোয়ালিটির স্তোরেজ ব্যবহার করার কারণে প্রথম সারির গেম গুলো দারুন স্পিডে খেলা যাবে । মিডিয়াম লাইফের ব্যাটারি ব্যবহার করার কারণে দীর্ঘক্ষন গেম প্লে করা যাবে না । গেমিং গ্রাফিক্স থাকার পরেও আমি মনে করি যারা প্রফেশনাল ও ক্রিয়েটিভ ভাবে গেম খেলার জন্য এই মোবাইলটিকে বেছে নিয়েছেন তাদের জন্য এই মোবাইলটি ততটা ভাল মানের এবং হাই কোয়ালিটির ফিচার দিতে পারবে না । ফ্রী ফায়ার এবং পাবজির মতো গেম গুলো হাই লেভেলের গ্রাফিক্সের সাথে গেম প্লে করা গেলেও দীর্ঘস্থায়ীভাবে এই স্মার্টফোনটি দিয়ে গেম প্লে করা যাবে না । তার মূল কারণ হল অক্টা কোর প্রসেসরে হাই লেভেলের মডেল থাকছে না ।


রিলিজের সময় এবং প্রাইস


26 জুলাই, 2021 মডেলটিকে দেশের মার্কেটে প্রথমবারের মতো রিলিজ করা হয়েছে । অফিশিয়াল এই মোবাইলটির বাজারমূল্য ৳18,000 টাকা । মোবাইলটির পারফরম্যান্স অনুযায়ী মোবাইলটির বাজেট নির্ধারণ অনেকটাই সাশ্রয়ী বলে আমার মনে হয়েছে । পারফরম্যান্স বিবেচনায় মোবাইলটিতে ততটা বেশি প্রাইস নির্ধারণ করা । প্রাইস এবং পারফরম্যান্স সামঞ্জস্য রেখেই মার্কেটপ্লেসগুলোতে ডিভাইসটিকে রিলিজ করা হয়েছে ।



মডেলটির উপর আমার মন্তব্য


মোবাইলটি পার্সোনাল ভাবে আমার কাছে অনেকটাই ভালো লেগেছে । রেডমি সিরিজের অন্যান্য মডেল গুলো থেকে এই মডেলটিতে ভিন্ন ফিচার দেওয়া হয়েছে । মডেলটির মূল্য বেশি নির্ধারণ করা হয়নি । অনলাইন থেকে অর্ডার করার সুযোগ রয়েছে তবে আপনি চাইলে অফলাইন থেকেও বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে মোবাইলটি অর্ডার করতে পারবেন এবং সরাসরি কিনতে পারবেন । সর্বোপরি এই মোবাইলটির কেবলমাত্র আমার কাছে নয় এমআই লাভারদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট বয়ে আনতে পারবে বলে আমি আশাবাদী । 15 থেকে 20 হাজার বাজেটের মধ্যে যাদের স্মার্টফোন কেনার আগ্রহ রয়েছে আমার পক্ষ থেকে সাজেস্ট রইল এই ফোনটি দেখার জন্য ।




Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads