দেশের মার্কেটে ওয়ালটন একটি সুপরিচিত ব্রান্ড । কম বাজেটের মধ্যে প্রিমো সিরিজ অনেকগুলো মডেল মার্কেটে রিলিজ করেছে । তাছাড়াও দেশি কোম্পানি হিসেবে ব্রান্ডেটির চাহিদা তুলনামূলকভাবে অনেক
বেশি । Walton Primo E12 মডেলটি সেগুলোর মধ্যে একটি । কম বাজেটের মধ্যে রাখার কারণে সব শ্রেণীর লোক এই মডেলটিকে খুব সহজেই কিন্তু রপ্ত করতে পারবে । মোবাইলটির দাম কম হওয়ায় প্রায় অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মোবাইলটি ততটা ভাল পারফরম্যান্স দিতে পারবে না । এটি একটি ভুল ধারণা , মোবাইলটির রিপোর্ট অনুযায়ী এটা বলা চলে যে দামের উপর সামঞ্জস্য রেখেই কিন্তু মোবাইলটিতে পারফরম্যান্স দেওয়া হয়েছে । মোবাইলটি কেনা উচিত হবে কিনা এবং ফাস্টেস্ট স্পিড পাওয়া যাবে কিনা ? গেমিং এর জন্য কতটা যোগ্য ? এক নজরে জেনে নেওয়া যাক ।
নেটওয়ার্ক কানেকশন
দেশের সমগ্র স্থান জুড়ে এই স্মার্টফোনটি দিয়ে উন্নত মানের নেটওয়ার্ক 4জি উপভোগ করা যাবে । থ্রিজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 2100 mbps স্পিড চালানো যাবে এবং ফোরজি নেটওয়ার্ক স্পিডে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ 42.2 এমবিপিএস নেটওয়ার্ক স্পিড সংযোগে রাখা যাবে খুব সহজেই । মোবাইলফোনটিতে জিপিআরএস এর সুবিধা রাখা হয়েছে । 4.2 মডেলের ব্লুটুথ এর সাথে অন্যান্য তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলো যেমন wifi-direct, ওয়াইফাই , এফএমরেডিও এবং হটস্পট ব্যবহার করা যাবে ফাস্টেস্ট স্পিডে । জিপিএস এর সুবিধা তো থাকছেই । ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে ব্যবহার করা যাবে 4.2 মডেলের ব্লুটুথ , জিপিএস এবং এফএম রেডিও । এর পাশাপাশি মাইক্রো ইউএসবি ক্যাবল এবং ওটিজি ক্যাবল ব্যবহারের সুবিধাতো থাকছেই । তারবিহীন নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে এনএফসি উপস্থিতির মিসিং লক্ষ্য করা যায় ।
মেমোরি
মোবাইলটির মেমোরি কার্ড স্লটে রয়েছে মাইক্রোএসডি এক্সসি টাইপ স্টোরেজ সিস্টেম । মোবাইলটির মেমোরির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আমরা খুব সহজেই দেখতে পারি এটিতে 1 জিবি রেম এর সাথে ব্যবহার করা হয়েছে 8 জিবি রোম । মোবাইলটির দাম অনুযায়ী স্টোরেজ ব্যবহার করার মিল লক্ষ্য করা যায় । ওটিজি ক্যাবল দিয়ে 64 জিবি পর্যন্ত রোম বাড়িয়ে নেওয়া যাবে । সর্বোচ্চ 64 জিবি রোম ব্যবহার করার সুযোগ থাকার কারণে মিডিয়া পারফরম্যান্স একটু কম । লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে রয়েছে রেমের স্বল্পতা যার কারণে হাই লেভেলের অ্যাপস অথবা সফটওয়্যার রান করা অনেকটা কষ্টদায়ক হয়ে যাবে । নেই উচ্চমানের মেমোরি অথবা স্টোরেজ পারফরম্যান্স যার মূল কারণ হলো বাজেট সিগমেন্ট । সাধারণ ব্যবহারের জন্য রোম ঠিকঠাক থাকলেও অনেকটা রেমের স্বল্পতা চোখে ধরা পড়ে ।
ক্যামেরা এবং সাউন্ড
মোবাইলটির প্রাইমারি ক্যামেরায় 5 মেগাপিক্সেল এর একটি এবং ফ্রন্ট ক্যামেরায় সেলফি তোলার জন্য 2 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে । প্রাইমারি ক্যামেরার সাথে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট এর উপস্থিতি লক্ষণীয় । মোবাইলটি দিয়ে ফুল এইচডি মুডে ভিডিও রেকোর্ডিং এবং দেখা যাবে না । মোবাইলটির সাউন্ড সিস্টেম অ্যালার্টে রাখা হয়েছে mp3,ভাইব্রেশন এবং রিংটোন । 3.5mm এর সাথে ব্যবহার করা হয়েছে লাউডস্পিকার । ওয়াইড অ্যাংগেলে অবস্থিত 5 মেগাপিক্সেল দিয়ে চমৎকার ইমেজ ক্যাপচার করা না গেলেও মোটামুটি ভালো মানের ছবি করা যাবে । শুটিং মডেলগুলোতে অটো ম্যানুয়াল , পানোরামা , ফিল্টার , নাইট সুট , ফেস বিউটি এবং স্লোমোশনের পাশাপাশি আরো অনেক ফিচার পাওয়া যাবে । 1080 পিক্সেলে যেকোন ভিডিও ক্যামেরা বন্দি করা যাবে । সেলফি তোলার জন্য মাত্র 2 মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা রয়েছে যেটা আসলেই অনাকাঙ্ক্ষিত । ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে ভাল মানের ফিচারের সাথে ছবি তোলার সুযোগ নেই বলা যায় ।
ডিসপ্লে প্ল্যাটফর্ম এবং অপারেটিং সিস্টেম
আকর্ষণীয় মানের ডিসপ্লে টাইপ দেখা যায় এই মোবাইলটিতে । FWVGA কোয়ালিটি টাচস্ক্রিনের সাথে এলসিডি সাইজ রয়েছে 5 ইঞ্চি । বলা চলে খুব বড় আকৃতির ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়নি । 720×1600 পিক্সেল রেজুলেশনের সাথে ডিসপ্লেতে সাপোর্ট করবে 16 মিলি কালার । টার্চস্ক্রিনে রয়েছে multi-touch এর সুবিধা । 128 গ্রামের এই মডেলটি ওজনে অনেকটাই হালকা । হাতে নিয়ে ব্যবহার করতে অসুবিধা হবে না বলে আশা করা যায় । 145 মিলিমিটার দৈর্ঘ্য , 72.8 মিলিমিটার প্রস্থের সাথে রয়েছে 9.7 মিলিমিটার পুরুত্ব । মোবাইলটিকে লাল , কালো এবং নীল কালারে মার্কেটে পাওয়া যাবে । মোবাইলটির অপারেটিং সিস্টেমে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন 10 ব্যবহার করা হয়েছে । 1.4 Hz কোয়াড কোর প্রসেসর এর সাথে Mali T-820 মডেলের জিপিউ রয়েছে । এই সময়ে এসেও এন্ড্রয়েড ভার্সন 10 যে বিষয়টা হয়তো আপনার ফোন কেনার আগ্রহ ধুলিস্যাৎ করে দিতে পারে ।
ব্যাটারি
রিমুভেবল lithium-polymer টাইপ ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যার ক্যাপাসিটিতে রয়েছে 2000 mAh পাওয়ার । মোবাইলের ব্যাটারি পারফরমেন্সে দীর্ঘমেয়াদি লাইফটাইম পারফরম্যান্স কখনো পাওয়া যাবে না বলে আশা করা যায় । অনলাইন ব্যবহারে মোবাইলটিকে বেশিক্ষণ ব্যবহার করা গেলেও বাকি গেম পারফরম্যান্স এবং অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনায় মোবাইলের ব্যাটারি ততটা ভালো পারফরর্মেন্স এর নয় । তবে এটা বলা যায় যে বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই মোবাইলটিতে স্বল্পমেয়াদি ব্যাটারি ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা
হয়েছে । ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম এর সাথে ওয়্যারলেস অথবা রিভার্স চার্জিং সিস্টেমের অনুপস্থিতি ব্যাটারির প্রিমিয়াম ফিচার কেড়ে নিতে বাধ্য হয়েছে । চার্জিং সিস্টেমে কিছুটা ভিন্নতা আনলে ব্যাটারি পারফরমেন্সে নতুনত্ব এড করার সুযোগ থাকতো । ফুল চার্জে ব্যাটারিটি টুকটাক ব্যবহারে সম্পূর্ণ একদিন রান করতে পারবে না ।
সিকিউরিটি
আমাদের মধ্যে প্রায় অনেকেই আছে যারা মোবাইল ফোনটিকে সুরক্ষা করার জন্য মোবাইলে সিকিউরিটি অপশন চালু করে রাখি । রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী এই মোবাইলটির সিকিউরিটি পদক্ষেপে রাখা হয়েছে অ্যাক্সিলারোমিটার , প্রক্সিমিটি এবং কম্পাস এর মত জনপ্রিয় কিছু সিকিউরিটি পদক্ষেপ । সিকিউরিটি পদক্ষেপগুলো অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্তকরণে সহায়তা করে থাকে । যে বাজার সিগমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে আমরা সহজেই বুঝতে পারি এখানে মাল্টিপল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেখতে পাওয়া যাবে না । এই বাজেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য মডেলগুলোও কিন্তু এই সেন্সরটি সচরাচর ব্যবহার করে না । তবে এখানে যে সিকিউরিটি সিস্টেম গুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো কিন্তু তুলনামূলক অনেক ফার্স্ট রান করতে সফল হবে বলে আশা করা যায় । যাহোক ফেইস আনলকিং সিস্টেম রাখাটা প্রয়োজন ছিল । সিকিউরিটি ব্যবস্থায় গর্জিয়াস কোন সিস্টেম পাওয়া যাবে না ।
গেমিং পারফরমেন্সের জন্য কত তা যোগ্য ?
মোবাইলটিতে আলাদা করে কোনো গেমিং প্রসেসর রাখা হয়নি , যার কারন বলা চলে এই ফোনটি গেম খেলার জন্য নয় । অফলাইন গেম গুলো টুকটাক ব্যবহার করা গেলেও প্রথম ধাপের অনলাইন গেমগুলো খুব ভালো গ্রাফিক্স এর সাথে খেলা যাবে না । তার কারণ হলো ফোনটিতে গেম খেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্টোরেজ রাখা হয়নি এবং স্বল্প মেয়াদী ব্যাটারি লাইফ ব্যবহার করা হয়েছে যার কারণে মোবাইলটি বেশিক্ষণ গেম খেললে ফোন গরম হয়ে যাবে । প্রফেশনাল ভাবে যারা গেম খেলায় আগ্রহী এই মোবাইলটি আসলে তাদের জন্য নয় । তবে টুকটাক অফলাইন গেম খেলার জন্য কিছুটা ভাল পারফরম্যান্স দিয়ে থাকবে । অনলাইন প্রথম সারির গেম যেমন ফ্রী ফায়ার অথবা পাবজি গেম প্লে তো দূরের কথা প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করাটাও অনেক কঠিন হয়ে যাবে । তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি যে গেম খেলার জন্য মোবাইলটি আসলে কতটা যোগ্য ।
অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে কি ?
বর্তমান এই সময়ে প্রায় সকল পণ্য সামগ্রী ঘরে বসেই স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ দিয়ে অর্ডার করা যায় । এই ফোনটিকে অনলাইন থেকে অর্ডার করা যাবে । তবে অবশ্যই ওয়েবসাইটের সত্যতা দেখে ফোনটি কিনা উচিত এবং অনলাইন থেকে এই মোবাইলটি কিনতে গেলে খরচ একটু বাড়তে পারে । মডেলটি দেশীয় পণ্য হিসেবে অনলাইন থেকে ক্রয় করার জন্য ততটা ঝামেলা পোহাতে হবে না । দেশের যেকোনো স্থান থেকে অর্ডার করার সাথে সাথে মুহূর্তের মধ্যেই মোবাইলটি আপনার হাতে পৌঁছে যাবে । অনলাইন থেকে ক্রয় করার জন্য আপনাকে ডেলিভারি চার্জ পরিশোধ করতে হবে । আমাদের দেশে অনলাইন ওয়েবসাইটে ওয়ালটন কোম্পানির অফিশিয়াল পেইজ বিদ্যমান রয়েছে , সেখান থেকেও আপনি চাইলে এই মডেলটির ছবি দেখে এবং ভেরিয়েন্ট বুঝে এই স্মার্টফোনটিকে অর্ডার করতে পারবেন ।
রিলিজের সময় এবং প্রাইস
স্বল্প বাজেটের মধ্যে একটু ভালো মানের স্মার্টফোন ব্যবহার করার আগ্রহ প্রায় সবার মধ্যেই দেখা যায় । আপনি যদি একটি ভালো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে চান তাও আবার 5,000 টাকার মধ্যেই । তাহলে Walton Primo E12 মডেলটি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে । জুলাই , 2021 দেশের মার্কেটে মোবাইলটিকে রিলিজ করা হয় । মোবাইলটি দেশীয় পণ্য হওয়ায় খুব সহজেই কিন্তু হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে । স্মার্টফোনটির বর্তমান বজার মূল্য ৳5,299 টাকা । দেশের মার্কেটগুলোতে অফিশিয়াল ভাবেই এই মোবাইলটিকে পাওয়া যাবে । তবে আনঅফিসিয়াল সেটটি দামের ক্ষেত্রে একেক দোকানে ভিন্নতা হতে পারে । স্বল্পমূল্যের মধ্যে থাকার কারণে সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার সুযোগ বেড়েছে । একটি মাত্র মেমোরি পারফরম্যান্স ভেরিয়েন্ট থাকার কারণে স্মার্টফোনটির মূল্য আলদা আলদা ভাবে ভাগ করা হয়নি ।
প্রাইস এবং পারফরমেন্সের সামঞ্জস্য কেমন ?
এটা হয়তো আমাদের সবারই জানা স্মার্টফোনের পারফরমেন্সের উপর ডিপেন্ড করে নির্ধারণ করা হয় । যে ডিভাইসের পারফরম্যান্স ভালো সে স্মার্টফোনটির মূল্যও তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই হওয়ার কথা । অপরদিকে যে স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স একটু কম তার মূল্যটাও স্বল্প পরিমাণ । Walton Primo E12 স্মার্টফোনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে 5,299 টাকা । যেটা লো-কোয়ালিটির প্রাইজের মধ্যে পড়ে । প্রাইস যেখানে একটু কম সেখানে পারফরম্যান্স কেমন হবে সেটা আমাদের সকলেরই জানা । তবে সব সময় পারফরমেন্সের উপর লক্ষ করাটা ঠিক নয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাইজের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে । উল্লেখিত স্মার্টফোনটিতে প্রাইজের সাথে মিল রেখেই পারফরম্যান্স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন